নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার হাতিয়ার ‘স্যানিটারি প্যাড’ তারই উদ্ভাবন

প্রকাশিত: ০৪-০৬-২০২০, সময়: ১৬:৪৪ |
Share This

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : একটি মেয়ে পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠে তার পিরিয়ড বা মাসিকের মাধ্যমে। তবে পিরিয়ড বা মাসিকের মতো একটা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে লজ্জা আর সংকোচের শেষ নেই সমাজে।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ে পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকায় বেশিরভাগ নারীরা নানা রোগে ভুগে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে সরকার এবং আইসিডিডিআরবি’র চালানো ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভেতে বলা হয়েছে, পিরিয়ডের সময়কার পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে প্রায় কোনো ধারণাই নেই বেশিরভাগ নারীর।

নারীরা মাসিকের সময় যে দুটো জিনিস মূলত ব্যবহার করেন তা হচ্ছে পুরনো কাপড় এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন। তবে এখন নারীরা সচেতন হয়েছেন অনেক বেশি। নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহার করছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড। পিরিয়ড বা মাসিক শব্দটি নিয়ে একধরনের রাখঢাক আছে এখনো। টেলিভিশনে নানান স্যানিটারি প্যাডের বিজ্ঞাপন দেখানোর সময় অনেক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করে।

তবে এখন যে ধরণের স্যানিটারি আমরা দেখি তার প্রথম বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছিল ১৯২১ সালে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টাব্দ ১০ শতকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের উদ্ভাবন হয়েছিল। জানেন কি? কে ছিলেন এই প্যাডের উদ্ভাবক। আজকে থাকছে তাকে নিয়েই। যিনি সারা বিশ্বের নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার হাতিয়ার উদ্ভাবন করেছিলেন।

স্যানিটারি প্যাড উদ্ভাবন করেন মেরি বিট্রিস ডেভিডসন কেনার। মেরি কেনার ১৯১২ সালে উত্তর ক্যারোলিনার শার্লোটে জন্মগ্রহণ করেন। আবিষ্কারের নেশা মেরি জন্মসূত্রেই পেয়েছিলেন। বলা যায়, দক্ষতা এবং চতুরতা ছিল তার রক্তেই। মেরির দাদা ট্রেনের ত্রিভুজ সংকেত উদ্ভাবন করেছিলেন। যদিও তা চুরি হয়ে যায়।

মেরির বোন মিল্ড্রেড ডেভিডসন অস্টিন স্মিথ বিখ্যাত বোর্ড গেমের উদ্ভাবক। এটি সেসময় সারা বিশ্বে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বেশ ব্যবসা সফল হয়েছিল এই গেমটি। তার বাবা সিডনি নাথানিয়েল ডেভিডসন ১৯১৪ সালে কাপড়ের স্যুটকেস উদ্ভাবন করেন। নিউইয়র্ক কোম্পানি তাকে এর জন্য ২০ হাজার ডলার প্রস্তাব করে। তবে সিডনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পরবর্তীতে তিনি মাত্র ১৪ ডলারে বিক্রি করতে পেরেছিলেন। তবে বাবার এই ব্যর্থতা মেরি কেনারকে দমাতে পারেনি। কেনার ১৯৩১ সালে হাই স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে দেড় বছর পর তাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। এরপর তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন।

পরবর্তী জীবনে মেরি কেনার ফুলের ব্যবসা করতেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে তার চারটি ফুলের দোকান ছিল। এ কাজে তিনি জীবনের ২৩ বছর পার করেছেন। সে সময় নারীরা পিরিয়ডের দিনগুলোতে পুরাতন কাপড় ব্যবহার করত। যা ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং বেশিক্ষণ তা সুরক্ষা দিতে পারত না। তাই নানা দুর্ভোগ পোহাতে হত তাদের। মেরি সব কিছু ভাবতে ভাবতেই একটি স্যানিটারি বেল্ট বানিয়ে ফেলেন।

যেটি তুলা দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি কাপড়ের তুলনায় বেশিক্ষণ ব্যবহার করা যেত। প্রথমে এটি আমেরিকানরা প্রত্যাখান করে। তবে পরে মেরির উদ্ভাবিত প্যাড সারাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তবে মেরি এর থেকে তেমন কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারেননি। বাবা-দাদার মতোই আর্থিক দিক দিয়ে তেমন কোনো উন্নতিই করতে পারেননি মেরি।

১৯৫৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মেরি আর তার বোন অনেক কিছুই উদ্ভাবন করেছেন। টয়লেট টিস্যুর উদ্ভাবক তিনিই ছিলেন। অন্ধ ব্যক্তিরা যাতে টিস্যু পেপার সহজেই বুঝতে পারেন তাই এতে ডট দেন। বাতজনিত রোগীদের জন্য ওষুধ তৈরি করেছিলেন মেরি কেনার। এখন আধুনিক গোসলখানা বলতে আমরা যা বুঝি তার উদ্ভাবক ছিলেন মেরি কেনার। গোসলখানায় ঝরনা এবং বাথটব লাগানোর চিন্তা তার মাথায়ই প্রথম আসে।

ব্যক্তিগত জীবনে কেনার ছিলেন খুবই সাধারণ। তিনি বিয়ে করেন জ্যাক নামের একজন প্রখ্যাত হেভিওয়েট বক্সারকে। যিনি জ্যাব্বো বা জনসন নামেও পরিচত ছিলেন। তারা কেনেডি কমপ্লেক্সের কাছে ভার্জিনিয়ার ম্যাকলিনে বাস করতেন। মেরি কেনারের নিজের কোনো সন্তান ছিল না। পালিত পাঁচ ছেলের জননী ছিলেন মেরি কেনার।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে