রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের চুল কেটে দিলেন শিক্ষক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১; সময়: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ |
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ছাত্রের চুল কেটে দিলেন শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪জন ছাত্রের মাথার চুল কেটে দেবার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্র বিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময়।
আর এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছেন ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের সহকারী প্রক্টর রাজিব অধিকারি ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুনি। তখন তারা নিরব দর্শকের মত দাড়িয়ে ছিলেন।
এ ঘটনায় (২৭ সেপ্টেম্বর) সোমবার দুপুরে ঐ বিভাগের বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে লাঞ্ছিত পরীক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠিরা এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার জন্য বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-১ এর গেটে সমবেত হলে ওই শিক্ষক ও তার ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখায়। তখন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে সবাইকে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করে।
 এ ঘটনার পর থেকে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবারও হুমকি ধামকির আশংকায় আতংকৃত হয়ে পড়েছে। অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে লাঞ্ছিত একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে ক্লাস চলাকালে ওই শিক্ষক চুল বড় রাখার বিষয়ে ছাত্রদের বকাঝকা করেন। তার ভয়ে সবাই পরদিনই চুল ছোট করেন। তারা জানায়, পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় আগে থেকেই দরজার সামনে ওই শিক্ষক কাচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের বেশ খানিকটা কেটে দিয়েছেন। তারা আরও জানায়, সবার সামনে এ ভাবে তাদের লাঞ্ছিত করার পর ওই শিক্ষক জোর করে তাদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেছেন। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে তাদের অনেকে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। ফলে লাঞ্ছিত এ ১৪জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন অত্যান্ত বদরাগী ব্যক্তি। কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করে থাকেন।
এদিকে এ ঘটনাটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে তা মূহুর্তে ব্যাপক ভাইরাল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার প্রভিসি প্রফেসর ড. জামিনুর রহমান বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এ ধরণের আচরণশৃঙ্খলা পরিপস্থি ও একাডেমিক বিধি বহি:র্ভুত। এছাড়া শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা পরিপস্থি। তিনি বলেন, করোনা কালিন সময়ে সবাইকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রেও তিনি স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করেছেন শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে। এতে তিনি স্বাস্থ্য বিধিও লঙ্ঘন করেছেন। আর শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কেটে দিয়ে জঘণ্য অপরাধ করেছেন। এর জন্য তার বিভাগীয় শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহকারী প্রক্টর জান্নাতুল ফেরদৌস মুনি বলেন, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। তাছাড়া বিষয়টি ওই সময়ই মিমাংসা হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বলেন, এ ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নেই।  তবে কয়েকদিন আগে কিছু ছাত্র আমার কাছে এসে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বলেছিল। আমি এতে রাজি হইনি। হয়তো বা সেই রাগে এ ধরণের অপপ্রচার চালিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য বিভাগের ছাত্ররা মিথ্যা গুজব ছড়াতে ফেসবুকে এ সব দিয়েছে। আমার বিভাগের কোন ছাত্র দেয়নি। এটা একটা গুজব।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অতিরিক্ত দায়ীত্বপ্রাপ্ত ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এই প্রথম শুনলাম। এ ধরণের ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগও পাইনি। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে