সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ৭ উপায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২১; সময়: ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ |
সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ৭ উপায়

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ঘরবন্দী থাকার এই সময়টাতে অনেক শিশুই সময় কাটানোর উপায় হিসেবে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার সুযোগে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেটে কাটাচ্ছে শিশুরা। শিশুদের এই ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ করতে বাবা-মাকে মূলত দুটি জিনিস ওপর নজরদারি রাখতে পরামর্শ দিচ্ছে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোন ধরনের বিপদে পড়ছে কি না। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তারা কোন আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা।

সাইবার অ্যাবিউজ (পর্ণগ্রাফি) এখন খুব কমন ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এটা একটা হুমকির জায়গা। আরেকটি হচ্ছে অ্যাডিকশন। বাচ্চারা তখন ইন্টারনেট ছাড়া থাকতেই পারে না বা থাকতেই চায় না এমন আচরণ করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌলিক কিছু জিনিসে পরিবর্তন এনে একটু সচেতন হলেই শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বা তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে-

১. প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার
শিশুদের যদি কোন ডিভাইস দেয়া হয় তাহলে সেটিতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করাটাই নিরাপদ বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে শিশু কী দেখছে তার উপর নজরদারি করা সম্ভব।

শিশুদের ই-মেইল অ্যাকাউন্টটি খোলার সময় তার জন্ম তারিখটি সংযুক্ত করার পর সেটি যদি ১৩ বছরের নিচে হয় তাহলে, গুগল আপনা-আপনিই বলবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের অধীনে হবে। আপনি করতে চান কিনা। সেক্ষেত্রে জানতে চাওয়া হবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি অন্য কার অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। অর্থাৎ সেখানে যেকোন একজন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট চাইবে। এখানে বাবা কিংবা মায়ের একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দেয়ার সুযোগ থাকে।

এরপর থেকে এই জি-মেইল অ্যাকাউন্ট পুরো ডিভাইসের অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করা হবে তখন সে এটি দিয়ে কী কী খুঁজলো, কী কী অ্যাপ ইন্সটল করলো, ইউটিউব-ফেসবুকে কী দেখলো- সব কিছু তখন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে দেখা যাবে। এমনকি ওই ডিভাইসটি নিয়ে শিশু কোথায় গেলো সেই স্থানটিও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

২. গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যাপ ইন্সটল করুন
প্যারেন্টাল সেফ ব্রাউজারে একটি অ্যাপ আছে। এটা যদি শিশুর ডিভাইসে ইন্সটল করা হলে কোন ধরনের অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট দেখতে পারবে না শিশু। সিকিউরিটি বিষয়ক আরো অ্যাপস আছে যেগুলো ইন্সটল করে রাখলে অন্যান্য অ্যাপসেও যাতে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট না আসে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অনেক সময় দেখা যায় যে, বাবা বা মায়ের ডিভাইসই শিশু ব্যবহার করে থাকে। সেক্ষেত্রে সেফ ব্রাউজার-প্যারেন্টাল কন্ট্রোল নামে একটা অ্যাপস আছে। সেটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা পিসিতে ইন্সটল করে যখন বাচ্চারা ব্যবহার করবে তখন সেটি চালু করে রাখা সম্ভব। এই অ্যাপটি এনাবল-ডিসাবল করার অপশন আছে। এটি প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়।

পিসি বা ল্যাপটপের ব্রাউজারে আলাদা ছোট প্লাগ-ইনস এর মতো ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ইন্সটল করে রাখলে সেটিও অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট আসা বন্ধ করে দেয়। এমনকি সার্চ করলেও আসবে না। এসব ব্রাউজার এক্সটেনশন ফ্রিতে পাওয়া যায়।

৩. চাইল্ড ভার্সন অপশনটি ব্যবহার করুন
ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চাইল্ড ভার্সন আছে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া যায়, যেটি তারা ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের সুপারভাইজ করার সুযোগ থাকে।

ফেসবুকে বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্য একটা অপশন আছে। মেসেঞ্জারেও অপশন আছে। সেখানে কেউ আপনার বাচ্চাকে অনুরোধ বা রিকোয়েস্ট পাঠালে আপনার কাছেও সেটি আসবে। আপনি অনুমতি দিলে তারা চ্যাট করতে পারবে।

৪. ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় সচেতন হোন
যে কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগটি নেয়া হচ্ছে তাদের বাচ্চাদের জন্য ‘সেফ ইন্টারনেট’ ফিচারটি আছে কিনা সেটি যাচাই করে নেয়া ভাল। এই ফিচারটি থাকলে কিছু সাইট বা কন্টেন্ট ব্লক করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া যায়।

ওয়াইফাই সংযোগের জন্য আমরা যে অ্যাকসেস পয়েন্ট বা ডিভাইস যেমন রাউটার ব্যবহার করি সেগুলোর বেশিরভাগ গুলোতেই কিছু সুবিধা থাকে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এগুলোর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড নিতে হবে যাতে এর উপর কন্ট্রোল থাকে। এর মাধ্যমে ল্যাপটপ থেকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের ফিচারগুলো এনাবল বা চালু করে দিতে হবে।

৫. ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় বেধে দিন
শিশুরা কতক্ষণ অনলাইন বা ইন্টারনেটে থাকবে তার একটা নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া উচিত। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে ইন্টারনেট সংযোগ বাসায় কখন কখন থাকবে আর কখন থাকবে না সেটির একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নিন।

এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন তাদের পোর্টালে ঢুকে একটা আবেদনের মাধ্যমে সংযোগের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নেয়া যায়।

আবার এটি ব্যক্তি পর্যায়েও করা যায়। ভাল মানের যেসব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আছে তাদের কাছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের একটা ফিচার আছে। যেখানে নির্ধারণ করা যায় যে, কোন কোন ডিভাইসে কখন ইন্টারনেট থাকবে, কোন কোন কন্টেন্ট থাকবে, কোন কোন অ্যাপস থাকবে কোনটা থাকবে না।

এছাড়া ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা আছে। এটি চালু থাকলে কোনভাবেই কিছু কন্টেন্ট শিশুদের কাছে আসবে না।

৬. শিশুর সাথে আপনিও অংশ নিন
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনিও শিশুর সাথে বসুন। শিক্ষামূলক বিভিন্ন চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। তাদেরকে সেগুলো দেখতে উৎসাহিত করুন। নতুন কিছু শিখতে বা তৈরি করতে তাদেরকে আগ্রহী করে তুলুন।

ইউটিউব কিংবা অন্য সাইটগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী যে বিষয়গুলো দেখে সেই একই ধরনের বিষয় বা কন্টেন্টগুলোই পরামর্শ বা সাজেশান্স হিসেবে আসতে থাকে।

আর এজন্যই শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী ভাল ও শিক্ষামূলক কন্টেন্ট দেখতে উৎসাহিত করলে তাদের কাছে সেসব কন্টেন্টই আসবে।

৭. আপনি কী দেখছেন সে বিষয়েও সতর্ক হোন
বাংলাদেশে সাধারণত কোন একটি বাড়িতে একটি ওয়াইফাই সংযোগ নেয়া হয় এবং বাড়ির প্রতিটি সদস্য সেই একই ওয়াইফাই শেয়ার করে ব্যবহার করে। ওই বাড়ির প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যরা যদি ওই ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে উল্টা-পাল্টা কিছু সার্চ করে বা দেখে, তাহলে সেগুলো ওই আইপি অ্যাড্রেসেই জমা হয়।

ওই ইন্টারনেট ব্যবহার করে যদি বাড়ির শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও কিছু ব্রাউজ করে তাহলে ওই জিনিস বা কন্টেন্টগুলো তাদেরও সামনে চলে আসে। তাই শিশুদের এ ধরনের কন্টেন্ট থেকে দূরে রাখতে ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে শিশুদের ডিভাইসে যদি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল জি-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট শিশুদের থেকে ফিল্টার করে দূরে রাখে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে