রাজশাহীর সেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার বেহাল দশা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২০; সময়: ৮:৫০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর সেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার বেহাল দশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট : সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে রাজশাহী জেলার প্রথম ও সারা দেশের মধ্যে ২৬ তম চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আইসিডিডিআরবি সূত্র অনুযায়ী ফ্যাসিলিটি স্কোর ও অনসাইট মনিটরিং সিস্টেমের ৭৮.৮২ স্কোর নিয়ে এ স্বীকৃতি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়। কিন্তুু বাস্তবচিত্র পুরোটাই ভিন্ন। চিকিৎসা সেবায় জেলায় প্রথম হওয়া এই প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীদের বিস্তর অভিযোগ। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

উল্লেখ্য যে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ৩ লক্ষ লোকের বসবাস। বৃহত্তম এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি সরকারী হাসপাতাল রয়েছে। সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুমোদিত চিকিৎসক পদ ২৫টি হলেও কর্মরত আছেন ১০ জন। প্রায় বছর ধরে কার্ডিওলোজি, মেডিসিন, অর্থপেডিক্স, সার্জারি, ইএনটি বিভাগে ডাক্তার নেই। এনেসথেশিয়া ও গাইনি বিভাগে ডাক্তার না থাকায় জরুরী প্রসূতিসেবা বন্ধ রয়েছে। টেকনেশিয়ান ও অপারেটরের অভাবে পড়ে আছে এক্্ররে, ইসিজি ও সনোরোজিষ্ট মেশিন।

সরকারী নির্দেশনা অুনযায়ী ৩ টাকা দিয়ে কুপনের বিনিময়ে নির্ধারিত রোগ অনুযায়ী ডাক্তারের সেবা পাওয়া যায়। নিয়ম অনুযায়ী কুপন সংগ্রহ করলেও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও কাঙ্খিত ডাক্তারের দেখা মিলে না। জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত ডাক্তার বসবে কিনা অথবা কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা মিলবে কিনা তা নিশ্চিত করে কেউ বলেও না। জিজ্ঞাসা করলে বলে ডাক্তার বাইরে কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ডাক্তার না থাকলে তার চেম্বারের সামনে নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে অথবা টিকিট কাটার পূর্বে রোগের বিবরন অনুযায়ী ডাক্তার অনুপস্থিত থাকলে তা রোগীদের অবগত করার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার মান নাই বললেই চলে। দৈনন্দিন ঔষুধ বিতরনের তালিকা বোর্ড অনুযায়ী ঔষুধ বিতরন করা হয় না এবং তারিখ অনুযায়ী ঔষুধ তালিকা বোর্ড হালনাগাদ করা হয় না। ডাক্তারদের উপস্থিতিতে ভাড়াটে, বহিরাগত মেডিকেল এসিসটেন্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে চলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম।

দক্ষতা না থাকলেও স্টোরকিপার মোমিনকে দিয়ে চলে ইসিজি পরিক্ষা। নির্ধারিত বিষয়ে দক্ষতা না থাকায় অধিকাংশ সময় ইসিজির সঠিক রিপোট পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। ফলে নিরুপায় রোগীরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক টেষ্টের জন্য গড়ে উঠে প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে এসে ভিড় জমায়।

আর এই অবস্থায় চারঘাট সদরে গড়ে ওঠা বেসরকারি অনুমোদনবিহীন কিèনিকগুলো নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে।

দেখা যায়, সাধারন রোগীদের ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য অনুমতি নেয়া প্রয়োজন সেখানে উপজেলা হাসপাতালের পাশের্^ গড়ে উঠা অনুমোদনহীন ডায়াগোনিস্টিক সেন্টার ও ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিগনদের অনুমতি ছাড়ায় প্রবেশ করতে পারে। এসময় তাদের আলাপচারিতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাইরে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

এছাড়া ডাক্তার চেম্বার থেকে বের হলে প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা জন্য হুমরি খেয়ে পড়ে ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি কর্তব্যরত কয়েকজন ডাক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের্^ গড়ে উঠা অনুমোদনহীন ক্লিনিক বা ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টারের অর্থের লোভে নিয়মিত রোগী দেখাসহ সার্জারী করতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেন সেবা নিতে আসা তারেক রহমান।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আশিকুর রহমান বলেন, ডাক্তার ও অপারেটর সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা সাময়িক ব্যহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন পদের ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও অপারেটরদের চাহিদা উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দেয়া হয়েছে, অতি শীঘ্রই এবিষয়ে সমস্য সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়া বলে জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে