গোপনে জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী লবিতে টাকা দিচ্ছে জ্বালানি জায়ান্টেরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০; সময়: ৬:৪৫ অপরাহ্ণ |
গোপনে জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী লবিতে টাকা দিচ্ছে জ্বালানি জায়ান্টেরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  পৃথিবীব্যাপী অতিমারির প্রকোপের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বনাশা বাস্তব হুমকির কথাটা ভুলে গেছেন সিংহভাগ মানুষ। চিরায়ত আবহাওয়া ও মৌসুমি চক্রের স্থায়ী এবং প্রলয়ঙ্করী এ বদল আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ইতোমধ্যেই পরিবর্তন আনছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে; সংঘাত আর অস্থিরতার নতুন ক্ষেত্র।

চলতি বছরের গোঁড়ার দিকেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আরোপিত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের জন্য তদ্বির করা কিছু প্রভাবশালী শিল্পজোট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় বহুজাতিক জ্বালানি কোম্পানি- বিপি এবং শেল। এসব শিল্পজোট গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ি।

ব্রিটিশ পেট্রোলিয়া- বিপি এবং রয়্যাল-ডাচ শেল কার্বন নিঃসরণ নিয়ে দেওয়া বানিজ্যিক স্বচ্ছতার অঙ্গিকার করে। এর আওতায় পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিকারী গ্যাসের নিঃসরণ আগামী কয়েক দশকের ভেতর শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলেছে কোম্পানি দুটি।

গতবছর আয়ের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় ও চতুর্থ কোম্পানির স্থানে ছিল বিপি এবং শেল। জ্বালানিখাতের জায়ান্ট দুটি এখনও সংশ্লিষ্ট শিল্পের আটটি লবি গ্রুপের সদস্য। এসব জোট অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবসা বৃদ্ধিতে তদ্বির করে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম হাফিংটন পোস্টের এক সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উথে আসে। সেখানে জানানো হয়, প্রভাবশালী মহলে জোটগুলির তব্দির প্রক্রিয়া এত গোপনীয় যে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় না।

তবে ফাঁস হয়ে যাওয়া নথি ও বিদ্যমান কিছু প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এ আটটি শিল্পজোটে অনেক দেশের রাষ্ট্রীয় এবং আঞ্চলিক বানিজ্য সংস্থা যোগ দিয়েছে। প্রতিনিয়তই তার ফরে এদের কলেবর বাড়ছে। নতুন শক্তিতে ভর করে তারা গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর যেকোনো উদ্যোগকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।

অবশ্য বিপি এবং শেল জানায়, আলোচিত শিল্পোজোট সমূহে সংস্কার করা হবে, এমন আশাতেই তারা সেখানে যোগ দিয়েছিল। ইতোমধ্যেই, জোট সদস্যপদ নিয়ে তারা একটি পর্যালোচনা শুরুর কথাও জানায়। তবে বিপি এবং শেল তারা মোট কতগুলো এমন গোপনীয় শিল্পজোটের সদস্য তার তালিকা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানায়।

এব্যাপারে বিপি’র বিবৃতিতে বলা হয়, ”জোট সদস্য হিসেবে কোথাও যদি আমাদের সঙ্গে অন্যদের মতের অমিল হয়; তাহলে নিজেদের নীতি অনুসারে আমরা সকলকে প্রভাবিত করে যৌথ সংস্কার আনার চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে এধরনের কাজে অনেক সময় লাগে।”

সংস্থাটি আরও জানায়, ”জোটের অন্যদের সমঝোতায় রাজি করাতে ব্যর্থ হলে, আমরা জনসম্মুখে সেসব মতবিরোধের বিষয় প্রকাশ করব। পাশাপাশি, বড় ধরণের মতভেদ দেখা দিলে এবং আলোচিত জোট তা নিরসনের উদ্যোগ না নিলে- আমরা তার সদস্যপদ ত্যাগ করব।”
শেলের একজন মুখপাত্র বলেন, আমাদের আগামী পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্ট সকল শিল্প সংস্থার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তুলে ধরা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আমরা যে অঙ্গিকার করেছি, তারা সেটা মেনে চলছে কিনা-আমরা তা খতিয়ে দেখব।”

এসময় তিনি আরও জানান, ”কিছু শিল্পজোট তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের অঙ্গীকারের কারণে বিনিয়োগকারী এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তাছাড়া, এসব জোট এমন কিছু দেশে ব্যবসা করে যেখানকার জ্বালানি বাজার অত্যন্ত আকর্ষণীয়।”

এই দুটি কারণেই শেল জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর বিরুদ্ধে কাজ করা আলোচিত আটটি জোটে যোগ দিয়েছে, এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।

তবে হাফিংটন পোস্টের অনুসন্ধান বলছে, ইতোপূর্বে দেওয়া কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতির মতো এটাও এক ফাঁপা বুলি। জ্বালানি জায়ান্ট দুটি জেনেশুনেই এসব শিল্পজোটে অর্থ দিচ্ছে- যাতে তারা নানা দেশের সরকার এবং সংস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসা প্রসারে সাহায্য করে।

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে