ইমামের তেলাওয়াত অশুদ্ধ হলে কী করবেন?

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২২; সময়: ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
ইমামের তেলাওয়াত অশুদ্ধ হলে কী করবেন?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কোরআন শুদ্ধ করে পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার ভিত্তিই হচ্ছে বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত। প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কোরআন এতটুকু শুদ্ধ করে পড়া ফরজে আইন, যার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয় না।

কারণ, `নামাজের কেরাতে `লাহনি জলি’ বা অর্থ বিকৃত হওয়ার মতো ভুল হলে নামাজ ভেঙে যাবে। চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভেতরে হোক বা পরে। সর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুল- যার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে যায় না, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না।’ (খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১১৮; ফতোয়ায়ে কাজিখান: ১/৬৭)

‘উম্মির পেছনে অর্থাৎ যার কেরাত অশুদ্ধ তার পেছনে শুদ্ধ তেলাওয়াতকারীর নামাজ শুদ্ধ হয় না।’ (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩২৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৪৩-১৪৪, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২/২৫৬)

তাই মসজিদ কমিটি বা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের উচিত- দ্রুত অশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ইমামকে অপাসারণ করে অন্য একজন শুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ইমাম নিয়োগ দেওয়া অথবা ওই ইমামকে শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত শিখে আসার তাগিদ দেওয়া। কেননা, যোগ্য ইমাম নির্বাচন করার ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি দায়িত্বশীল।

জেনে শুনে অযোগ্য ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা মসজিদ কমিটির সদস্যরা সমাজের সকলের হক নষ্টকারী হিসেবে আল্লাহর কাছে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল আর তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জবাব দিতে হবে।’ (বুখারি: ৭১৩৮)

যদি নতুন ইমাম নিয়োগ করা বা ওই ইমামকে শুধরানো কোনোটিই সম্ভব না হয়, তাহলে আপনি আশপাশের অন্য কোনো মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করবেন ৷ তাও সম্ভব না হলে জামাতের সওয়াব পেতে উক্ত ইমামের ইক্তেদা করার পর, নামাজটি আবারও পড়ে নেবেন বা দোহড়িয়ে নিবেন। (আল হিদায়া: ১/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক: ১/৬৩০-৬৩১: ফতোয়ায়ে শামি: ২/৩২৪: ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/ ১৪৩-১৪৪ )

আর নতুন ইমাম নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত কে ইমামতি করবেন-সে ব্যাপারে মাসয়ালা হচ্ছে- যিনি নামাজে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ হওয়া সম্পর্কে মাসয়ালাগুলোর জ্ঞান রাখেন, এরপর হাফেজ, এরপর যিনি নামাজের আহকাম সম্পর্কে জানেন, এরপর মুত্তাকি ব্যক্তি, এরপর বয়স হিসেবে যিনি বড়। যদি সবাই এই গুণাবলিতে সমান হন, তাহলে তাঁদের থেকে যাকে নির্বাচন করা হয়, তিনিই ইমামতির হকদার। (সহিহ বুখারি: ৬৩৭)

আর যে ইমামের প্রতি মুসল্লিরা অসন্তুষ্ট থাকে, সে ইমামের পরিণতি সম্পর্কে প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ তিরমিজি শরিফে একটি অধ্যায় আনা হয়েছে। আমর ইবনুল হারিস ইবনু মুস্তালিক (রহ.) বলেন, ‘দুই ব্যক্তির ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি হবে। যে নারী তার স্বামীর অবাধ্য আচরণ করে এবং কোনো গোত্রের ইমাম, যাকে তারা অপছন্দ করে।’ (তিরমিজি: ৩৫৯)

অন্য হাদিসে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কান অতিক্রম করে না (কবুল হয় না)। পলায়নকারী দাস, যে পর্যন্ত তার মালিকের কাছে ফিরে না আসে; যে নারী তার স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ইমামকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা পছন্দ করে না। (তিরমিজি: ৩৬০)

একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, লোকেরা যদি ইমামকে খারাপ জানে তাহলে তাদের ইমামতি করা তার জন্য মাকরুহ। কিন্তু ইমাম যদি জালিম (প্রকৃত অপরাধী) না হয়, তাহলে যারা তাকে খারাপ জানে তারা গুনাহগার হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ ও ইসহাক (রহ.) বলেছেন, যদি এক-দুই অথবা তিনজন লোক তাকে খারাপ জানে, তাহলে তার ইমামতি করাতে কোনো অপরাধ নেই। হ্যাঁ, যদি বেশির ভাগ মুসল্লি তাকে খারাপ জানে তাহলে তাদের ইমামতি করা তাঁর জন্য ঠিক হবে না। (তিরমিজি: ৩৫৮)

‘ইমাম হচ্ছে দায়িত্বশীল আর মুয়াজ্জিন আমানতদার, হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ দেখান এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা করুন’ (তিরিমিজি: ২০৭)।

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মসজিদের ইমাম হিসেবে শরিয়তের দৃষ্টিতে যোগ্য ব্যক্তিকে কবুল করুন। আমিন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে