এর আগে এরকম কিছু কেউ দেখেনি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নাসার নতুন রোভার ‘পারসিভেরেন্স’ মঙ্গলগ্রহে সফলভাবে অবতরণের পর থেকেই সেখানকার ছবি পাঠাতে শুরু করেছে। শুক্রবার নাসা ছয় চাকার রোভারটি লাল গ্রহের মাটি স্পর্শ করার আগ মুহূর্তে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করেছে। বার্তা-সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত বৃহস্পতিবার মহাকাশযানটি যখন মঙ্গলের মাটির কাছাকাছি পৌঁছেছিল তখন রোভারে থাকা ক্যামেরায় রঙিন একটি ছবি তোলা হয়েছিল। ওই ছবি মানবজাতির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।
মঙ্গলে অবতরণের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে লস-অ্যাঞ্জেলসের কাছে নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) থেকে একটি অনলাইন নিউজ বিফ্রিং থেকে নাসার মিশন পরিচালকরা ছবিটি প্রকাশ করেন।
মিশনটির অবতরণকারী দলের নেতা অ্যারোন স্টেহুরা জানান, ছবিটি দেখার পর তিনি ও তার সহকর্মীরা বিস্ময় ও উল্লাসে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এরকম কিছু আমরা আগে কখনো দেখিনি।’
প্রথম ছবিতে ক্যামেরার লেন্সে রোভারের রোবট হাতের ছায়া পড়তে দেখা গেছে। মঙ্গলের মাটির ধুলাবালি, পাথরও ছবিতে দৃশ্যমান। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে পারসিভেরেন্স রোভারটির চাকাগুলো মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি প্রথমবারের মতো কোনো মহাকাশযানের গ্রহের মাটির স্পর্শ করার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি।
এই প্রথম পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহের স্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেল বলে জানান তারা। আজ শনিবার বিবিসি জানায়, পারসিভেরেন্স মঙ্গলের বিষুবরেখার কাছাকাছি বিশাল এক গহ্বরে নেমেছে। ওই গহ্বর বা ক্রেটারের নাম দেওয়া হয়েছে জেজেরো। সেখানেই অতীতে গ্রহটিতে কখনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না সেটি সন্ধান করা হবে।
ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার অবতরণের সময় মহাকাশযানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কি না তা নিশ্চিত হতে সব হার্ডওয়্যার পরীক্ষা করা করা হচ্ছে। তারা ধীরে ধীরে রোভারটির সিস্টেমগুলো চালু করতে শুরু করেছেন। মঙ্গল মিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আদর করে এই রোভারটিকে ‘পারসি’ বলে ডাকছেন। পারসি এখনো ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে বলে জানান তারা।
পারসি’র ক্যামেরার ধরা পড়া জেজেরো ক্রেটারের বিস্তারিত ছবিগুলো আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে জানা গেছে। পারসির সারফেস স্ট্র্যাটেজিক মিশন ম্যানেজার পলিন হোয়াং বলেন, ‘শনিবার রোভারটির যন্ত্রগুলো সফলভাবে সংযুক্ত হলে আমরা আরও অনেক ছবি পাব। আমরা রোভারটির একটি ডেক প্যানারোমা করব ও চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ছবিও নেব।’
নাসার বিজ্ঞানীরা জানান, অবতরণ প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে পারসিকে একটি হ্রদের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ব-দ্বীপের মতো একটি অংশের দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এটি অবতরণ করেছে। এই এলাকাতেই রোভারটি তার সন্ধান কাজ চালাবে। মিশনের ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট কেটি স্ট্যাক মরগ্যান জানান, নাসার বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই ক্রেটারটির সন্ধান করতে শুরু করেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এমনকি এই একটি-দুটি ছবি থেকেও আলোচনা করার মতো বেশ কিছু আকর্ষণীয় পাথর আছে। আমরা এই শিলাগুলোর রঙ ও গঠন বোঝার চেষ্টা করছি, শিলাগুলো কীসের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং মঙ্গলগ্রহের মাটিতে এগুলোর প্রভাব কী সেসব জানার চেষ্টা করছি।’ ১ দশমিক ২ কিলোমিটারের মধ্যে রোভারটি যতগুলো শিলার অনুসন্ধান করবে, সবগুলোকে আমেরিকান পার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত নাম দেওয়া হবে। এটি মঙ্গলে অবতরণ করা নাসার পঞ্চম রোভার। এর প্রাথমিক মিশন প্রায় দুই বছর ধরে চলবে। যদি সব হার্ডওয়্যার ঠিক থাকে তবে নাসা হয়তো আরও কিছুদিন সেখানে এটিকে রাখতে পারে।
জীবনের চিহ্ন অনুসন্ধানের পাশাপাশি, পারসির অন্যান্য মূল উদ্দেশ্য হলো- শিলার নমুনা নির্বাচন এবং প্যাকেজ করা। এগুলো পরবর্তী মিশনের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
4