করোনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২০; সময়: ১:৩৪ অপরাহ্ণ |
করোনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে

হামজা মাহমুদ: করোনার ভয়াল থাবায় থমকে গেছে সারা বিশ্ব। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চায়না, ইতালি, ফ্রান্স এর মতো অত্যাধুনিক দেশগুলো। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও।

প্রাণঘাতী এই মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, অসংখ্য মানুষ হারিয়েছে তাদের আপনজনকে। কেউবা হারিয়েছেন বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল, বেকার হয়েছেন অসংখ্য কর্মজীবী মানুষ।

দেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ শে মার্চ সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন ফলে বন্ধ হয়ে যায় অফিস-আদালতসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমতে থাকলে পরবর্তীতে গত ৩০ মে সরকারের সাধারণ ছুটি শেষ হয়। খুলে দেওয়া হয় অফিস-আদালত। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এখনো বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

যার কারণে টানা ৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলতি বছরে কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা, বাসায় বসে অলস সময় পার করছেন তারা, আসক্ত হয়ে পড়ছেন মোবাইল ফোনে, কেউবা রাত জেগে গেম খেলছেন অথবা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করছেন। অনেকেই মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, কারো বা একঘেয়ে হয়ে উঠেছে জীবন। বেড়ে যাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা, আবার কেউ কেউ দাবি করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার।

এই নিয়ে আমরা কথা বলেছি রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিলা খায়ের বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি এই সময়টাতে দক্ষতা উন্নয়নের অনলাইন কোর্সগুলো করেছেন। বাইরে কোন কাজ না থাকায় বাসাতে থেকে একঘেয়ে লাগছে তারও। তিনি আরো বলেন, যেহেতু সবকিছুই খুলে দেওয়া হচ্ছে এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে সেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে ভালো হয়।

রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাযকীয়া তামান্না বলেন, তার সময় কাটছে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স ও ক্লাস করে, দীর্ঘ সময় বাসায় থাকার ফলে কিছুটা বিরক্তি কাজ করছে। তবে সরকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ শিক্ষার্থীরাই আগামীর ভবিষ্যৎ তাই তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।

রাজশাহী কলেজের প্রানীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রুমানা খাতুন জানান, অনলাইনে ক্লাসের জন্য আধুনিক ডিভাইস না থাকায় অনলাইনে ক্লাস করতে না পারলেও তিনি এই সময়ে পাড়ার ছোটদের পড়াতেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন, এবং অনেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন বলে তিনি মনে করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে হয়তো এই সমস্যাগুলো কিছুটা হলেও কমবে।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী খুশি জানান, তার সময় কাটছে নেট ব্রাউজিং বা টেলিভিশন দেখে তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একটিমাত্র পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৭ মাস। তিনি আরো বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আমার মতো অনেকেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। কারণ একটা পরীক্ষার জন্যই হয়তো লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী বেকার বসে আছে কোথাও আবেদনও করতে পারছে না”।

এদিকে সরকারি পি এন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বাসায় থেকে পড়াশোনা করলেও টেলিভিশন দেখেই অধিকাংশ সময় পার করছে আমার মেয়ে, এই সময়ে ধর্মীয়ভাবে সে সক্রিয় হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন খুলে না দেয়াই ভালো, যেহেতু দেশে এখনো করোনার প্রভাব রয়েই গেছে এবং মৃতের সংখ্যাও কম নয়।

রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি দুইটা শিক্ষকের কাছে পড়ছে আমার ছেলে, তবে আগের তুলনায় কম্পিউটারে বেশি গেমস খলেছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে বাচ্চারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরতে পারে তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাটায় উত্তম।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ওয়ারদাতুল আকরাম বলেন, করোনা আসলে একেক জনকে একেক ভাবে ধরছে। আবার সবাই যে করানো আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্তু নয়। তবে করোনার প্রকোপ রয়েছে তাই এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে দিয়ে আরো কিছুদিন দেখা উচিত।

ক্লাসের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভিন্নভাবে ক্লাস নেওয়া উচিত যাতে করে তারা লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারে। আর বাসায় অলসতা ও মোবাইল গেমিং ও ইন্টারনেট আসক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এজন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের দিকে নজর রাখতে হবে তাহলে তারা হয়তো এটা হতে কিছুটা হলেও দূরে থাকতে পারবে বলে জানান তিনি ।

  • 48
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে