রাজশাহীতে পৌর নির্বাচনে আগাম মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২০; সময়: ৫:০৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে পৌর নির্বাচনে আগাম মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

আসাদুজ্জামান মিঠু: দেশের নির্বাচিত পৌরসভাগুলোর মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগামী জানুয়ারির মধ্যে দুই শতাধিক এই স্থানীয় সরকারে ভোট করবে সংস্থাটি।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফরহাদ আহাম্মদ খান সম্প্রতি মিডিয়া কর্মীদের জানান, আগামী অক্টোবরে দেশের পৌরসভাগুলোর নির্বাচনের জন্য সময় গণনা শুরু হবে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যেই ভোট করতে হবে।

ভোটের এখনো কয়েক মাস বাকি। তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে রাজশাহীর ১৩টি পৌরসভার মধ্যে তানোর উপজেলার দুই পৌর এলাকায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একাধিক সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ইতোমধ্যেই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রার্থীদের রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পৌরসভার বিভিন্ন মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

বিশেষ করে কারোনা মহামারির মধ্যে কর্মহীন,হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে কিছু ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করে ভোটারদের কাছা কাছি থাকতে চেয়েছেন অনেক প্রার্থী।

পৌরসভার হাট-বাজার ও বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও কোরবানীর ঈদে মোটরসাইকেল শো-ডাউন করেও অনেকে জানান দিচ্ছেন নিজের প্রার্থিতার বিষয়টি।

তবে এবার প্রতিটি পৌরসভায় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন তরুণ মুখ।
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় দুইটি পৌরসভা। একটি আওয়ামীলীগ ও একটি বিএনপির দখলে। মুন্ডুমালা পৌর সভায় বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী। অপরটি তানোর পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিএনপির নেতা মিজানুর রহমান মিজান।

এই দুই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সম্ভব্য মেয়র প্রার্থী নতুন দুই মুখ ভোটের মাঠে কাজ শুরু করেছেন। ২০২০ সালের শুরু থেকেই তারা বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রী ছবির সাথে নিজের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড ব্যানার করে পৌর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূণ স্থানে ঝুলিয়ে রেখেছেন। শুধু বিল বোর্ডই নয়,করোনার মহামারিম মধ্যেও তারা পৌর এলাকার ভোটার দারে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেছেন।

মুন্ডুমালা পৌর সভার বর্তমান মেয়র গোলাম রাব্বানী প্রায় এক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন তিনি এবার মেয়র নির্বাচন করবেনা। সে কারণে তার অনুগত হিসাবে পরিচিত পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নতুন মুখ ও তরুণ নেতা সাইদুর রহমান মেয়র নির্বাচন করবেন বলে এক বছরের বেশি সময় ধরে ভোটের মাঠে আছেন। তিনি ফেস্টুন-বিলবোর্ড সাটায় রেখেছেন।

সাইদুর রহমান বিশেষ করে করোনা মহামারির মধ্যে পৌর এলাকায় কর্মহীন,গরিব,দুখি এমন প্রায় ৬ হাজার মানুষকে চাল,ডাল,আলু,তৈল,সাবার বিতারণ করে বেশ আলোচনার এসেছেন। দুই ঈদে বিতরণ করেছেন সেমাই, চিনি, পোলাও চাল সহ নানা সামগ্রি। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরসহ সকল শ্রেনীর মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

এদিকে মুন্ডুমালা পৌর ্সভায় ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনটির দলীয় প্রার্থী ছিলেন ফিরোজ কবির। ফিরোজ কবির আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর কাছে বিপুল পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। পরাজিত হওয়ার পর থেকে ৫ বছর তিনি আর ভোটারদের কাছে যাননি। তিনি এখন প্রায় ভোটারদের কাছে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

তবে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোজ্জামেল হক করোনা সময় কিছু ত্রাণ বিতরণ করেছেন এবং নেতাকর্মিদের এবং ভোটারদের কাছে নানা ভাবে থাকার চেষ্টা করছেন। চলতি বছর তিনি মেয়র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং মাঠে কাজ করছেন।

তানোর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলিয় প্রার্থী ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমরুল ইসলাম। তিনি গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মাত্র ১৩ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। ইমরুল ইসলাম আবার ও নির্বাচন করার জন্য ভোটের মাঠে কাজ শুরু করেছেন। মাঠে আছেন বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজানও।

তবে, তানোর পৌরসভায় আরো একজন আওয়ামী লীগের নতুন মুখ আবুল বাসার সুজন রাজশাহী নগরীর একটি ওর্য়াডের আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি চলতি বছর থেকে তানোর পৌর সভায় মেয়র নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠ আছেন। তিনি বিল বোর্ড ,ব্যানার সাটিয়েছেন। এবং করোনাকালিন সময়ে পৌর এলাকায় ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করছেন।
তবে,আবুল বাসার সুজনকে নিয়ে তানোর পৌর এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু বির্তক আছে। কারণ সুজন হলেন রাজশাহীর নগরীতে বাড়ি। তিনি এখানে বহিরাগত বলে একাংশে নেতাকর্মিদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। সুজন তানোর পৌর মেয়র নির্বাচন করুক অনেক নেতাকর্মি মেনে নিতে চাইছেন না।

গোদাগাড়ী উপজেলায় দুইটি পৌরসভা। দুই পৌরসভায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের মেয়র নির্বাচিত আছেন। গোদাগাড়ী পৌরসভার বর্তমান মেয়র মরিরুজ্জামান বাবু ও কাকন হাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল মজিদ পুনোরাই নির্বাচন করার জন্য জোরতাল ভাবে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। দুই পৌর সভায় ভোটের মাঠে আছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নতুন সম্ভব্য প্রার্থী।

এছাড়াও তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, কেশনহাট, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, কাঠাখালি, নওহাটা, আড়ানী ও চারঘাট পৌরসভায় বর্তমান মেয়রেরাসহ বিএনপি-আওয়ামী লীগের একাধিক নতুন মুখ সম্ভব্য মেয়র প্রার্থীরা নানান ভাবে ভোটার কাছে গিয়ে পরিচিতি হওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বিলবোর্ড সাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে।

কোরবানীর ঈদের আগে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফরহাদ আহাম্মদ খান জানিয়েছেন, দেশে পৌরসভা রয়েছে ৩২৮টি। এরমধ্যে নির্বাচনের উপযোগী রয়েছে ২৫৬টি। তবে এই সংখ্যা কমতে বা বাড়তে পারে। কেননা, মামলাসহ আইনি জটিলতার কারণে সংখ্যায় কিছুটা এদিক-সেদিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সর্বশেষ দেশের পৌরসভাগুলো একযোগে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। আর নির্বাচিত মেয়ররা শপথ নিয়ে প্রথম সভা করেছিলেন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে।

আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত পৌরসভার মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর ভোট করতে হয় সময় শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে। এক্ষেত্রে অক্টোবর থেকেই সময় গণনা শুরু, এমনটি ধরে নিয়েই কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ইসি।

করোনা পরিস্থিতি যদি বর্তমানের মতো থাকে, তবে জানুয়ারির মধ্যেই ভোট হবে। আর যদি এর চেয়ে অবনতি হয়, তবে ভোট পেছাবে। এছাড়া একযোগে হবে, না কি কয়েক দফায় হবে, সে সিদ্ধান্ত এখানো হয়নি। তবে গতবার একযোগেই হয়েছিল।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন করা যাবে এমন পৌরসভাগুলোর নাম ও লিস্ট তৈরির কাজ চলছে। সময় ঘনিয়ে এলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া কোনো পৌরসভায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা আছে কি না, সে বিষয়েও মতামত চাওয়া হবে। তবে সেটা আগামী অক্টোবরের দিকে।

  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে