রাজশাহীতে ধর্ষণের শিকার শিশুর ভর্তি বাতিল করল কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২; সময়: ১১:১০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে ধর্ষণের শিকার শিশুর ভর্তি বাতিল করল কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিশুটির পরিবার। এ ঘটনায় সামাজিকভাবে পরিবারটিকে হেয় করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও শিশুটিকে একটি আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিল পরিবার। সেই ভর্তি বাতিল করে তাকে মাদ্রাসা থেকে বিদায় করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিশুর অভিভাবকের আচরণ খারাপ হওয়ায় তাকে বের করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার পর শিশুটির মানসিক সমস্যা হয়েছে। তাকে তার পরিবার একজন মানসিক চিকিৎসক দেখাচ্ছে।

ওই শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। নিজের কোনো ভিটেমাটি নেই। রেলের জমির বস্তিতে একটি ঘর করে বসবাস করেন। এক সড়ক দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেলেও শিশুটির বাবা এখন অটোরিকশা চালান। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া হিসেবে চাকরি করেন শিশুর মা।

ভুক্তভোগী শিশুর মা বলেন, ২০২০ সালের ২১ মার্চ তিনি ছিলেন হাসপাতালে। শিশুর বাবা অটোরিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। ওই কিশোর বাড়িতে গিয়ে শিশুটির কাছে দিয়াশলাই চায়। ওই শিশু দিয়াশলাই দিলে কিশোর সেটি নিয়ে হাঁটা ধরে।

দিয়াশলাইয়ের জন্য ওই শিশুও পিছু নেয়। তখন বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে শিশুটিকে ধর্ষণ করে ওই কিশোর। ধারণ করা হয় ভিডিও। ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করে। জব্দ করা হয় মুঠোফোন। পরে এ ঘটনায় ওই বছরের ২২ মার্চ মামলা করা হয়। ওই মামলায় ওই কিশোর এখন কারাগারে।

শিশুটির মা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে মেয়েটা পেটের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব করে। দিনে দিনে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। তার মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এ জন্য তাকে একজন মানসিক চিকিৎসককে দেখাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সমাজের মানুষের কাছে এত লাঞ্ছনা শুনতে হচ্ছে, এটা খুবই খারাপ লাগছে। সবাই তার মেয়েটাকে খারাপ চোখে দেখছে। মেয়েটা ছোট, সেটা কেউ বুঝছে না।

শিশুর মা বলেন, ১০ দিন আগে রাজশাহী নগরের একটি মহিলা মাদ্রাসায় তাঁর মেয়েকে ভর্তি করা হয়েছিল। বেসরকারি এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ভর্তির তিন দিন পর তাঁর মেয়েকে মাদ্রাসার গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। তারপর গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তখন কাঁদছিল। পরে মাদ্রাসার পরিচালক তার মেয়েকে দূরে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিতে বলেন।

মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহা. হাবিবুল্লাহ বলেন, যেসব অভিভাবকের আচরণ খারাপ, তাঁদের তাঁরা মাদ্রাসায় রাখেন না। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তিনি পরে শুনেছেন। আসলে ওর মা-বাবার আচরণ খারাপ। এমন কথা বলে যে মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট হয়। এ জন্য অন্যান্য অভিভাবক আপত্তি করেন। তাই শিশুটির ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

অভিভাবকেরা তো মাদ্রাসায় পড়েন না। তাঁদের ব্যবহার খারাপের কারণে শিশুর ভর্তি বাতিল করা কি সমীচীন হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি এটা করেছেন।

নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘শিশুটার মায়ের দায়ের করা মামলাটা তদন্তাধীন। তদন্ত চলার সময় কিছু বলব না। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন ডিএনএ টেস্ট করা হবে। তারপর অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। ডিএনএ টেস্ট না হওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে