রাজশাহীতে ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকির এএসআইয়ের অডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২; সময়: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকির এএসআইয়ের অডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর : পুলিশে কর্মরত সেই বিতর্কিত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশরাফুল ইসলামের এবার অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর প্রাণনাশ, ব্যাবসায়ীক ও আর্থিক ক্ষতি করার হুমকির অডিও রেকর্ডটি গত কয়েকদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে। হুমকি দেয়া পুলিশের ওই এএসআই আশরাফুলের প্রশাসনিক ও শাস্তিমুলক ব্যবস্থা চেয়ে কমেন্ট এবং পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ৫ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের অডিওটি শুনে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত এএসআই আশরাফুল ইসলাম রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার এক ব্যবসায়ীর প্রাণনাশ ও আর্থিকভাবে ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি নিজে পুলিশে চাকুরী করার সুবাদে ওই ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকীও দেয়া হয়েছে অডিও রেকর্ডটিতে।

অডিও রেকর্ডটিতে এএসআই আশরাফুল ইসলাম নার্গিস বেগম নামের এক মহিলার সাথে কথা বলেছেন। ওই মহিলা সম্পর্কে এএসআই আশরাফুলের ভাবি হন।

মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা কথোপকথনে এএসআই আশরাফুল বলছেন ‘আজ হোক কাল হোক, দুই বছর পর হোক আর ২০ বছর পরে হোক বকুলকে আমি ছাড়বো না। বকুলের যে কি ক্ষতি হবে সে (বকুল) নিজেও কল্পনা করতে পারবেনা। তাকে (বকুল) আমি সামাজিক ভাবে, ব্যবসায়ীক ভাবে, আর্থিকভাবে ক্ষতি করবো। তাতে আমার যা হয় হবে। পুলিশের ট্রেনিং করা আছে।

সহজেই বকুলকে আমি ছাড় দেবো না। ওর একটা বিহীত করেই ছাড়বো। এতে আমি যদি মরেও যাই তাতে আমার স্ত্রী সন্তানের কোনো ক্ষতি হবেনা। মাসে মাসে তারা ১০ হাজার টাকা করে পাবে। ১০ মণ করে ধান পাবে।

এমনকি প্রয়োজনে দুর্গাপুর থানায় অথবা পুঠিয়া থানায় পোস্টিং নিয়ে আসব। আমি মরতে রাজি আছি তবুও শত্রুকে আমি ক্ষমা করবো না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই অডিও রেকর্ডটি ইতিমধ্যে অসংখ্যবার শেয়ার হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এএসআই আশরাফুল বর্তমানে বসবাস করেন রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা গ্রামে নানার বাড়িতে। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পলাশবাড়ী থানা এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত জসিম উদ্দিন। তার বাবাও পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

গ্রামের বাড়ি রংপুরে হলেও নওগাঁ জেলায় ঠিকানা দেখিয়ে এএসআই আশরাফুল পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদেন। নানার বাড়ি সিংগা এলাকাতেই সে এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করে। জমিজমা নিয়ে তার আপন খালাতো ভাই ব্যবসায়ী বকুল ইসলামের সাথে বিরোধ রয়েছে। তার জের ধরে বকুল ইসলামের নানাভাবে ক্ষতি করার হুমকী দেয় সে।

ব্যবসায়ী বকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমিও লোক মারফত খবর পাই যে আমার সামাজিক, আর্থিক ক্ষতি করার হুমকী ও আমার প্রাণনাশ করার হুমকী দিয়ে আশরাফুল এক মহিলার সাথে কথা বলেছেন। ওই অডিও রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে আমিও শুনেছি।

ইতিপূর্বেও আশরাফুল পুলিশে চাকুরী করার সুবাদে আমার বসত বাড়ি ভাংচুর করেছে। আমার পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন করেছে। আমার আম বাগানের গাছ কেটে ফেলেছে। আমি এসব ব্যাপারে থানা পুলিশ ও আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আমার অভিযোগ পেয়ে দুর্গাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে এএসআই আশরাফুল থানা পুলিশের সাথেও অশোভন আচরণ করেন।

এমনকি সে নিজেও পুলিশ সদস্য হলেও থানার ওসি সহ তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আমিও এএসআই আশরাফুলের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে পুলিশ সিকিউরিটি সেল, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ গুলো আমলে নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযোগের তদন্ত করছেন।

বকুল আরো বলেন, ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডের ব্যাপারে আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করবো। এছাড়াও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পুণরায় লিখিত অভিযোগ দেব।

এ ব্যাপারে পুলিশের এএসআই আশরাফুলের সাথে কথা বলতে তার ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হলে রাজশাহী জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে এমন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি গোচরে আসলে বা এ বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ সহ লিখিত অভিযোগ দিলে ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে