রাজশাহীতে অবৈধ বালুমহাল বছর ঘুরতেই বৈধ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২; সময়: ১:৩৭ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে অবৈধ বালুমহাল বছর ঘুরতেই বৈধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর বালুমহাল দুটি ২০১৯ সালে ইজারা নিয়েছিলেন আমিন ট্রেডার্সের মালিক আজিজুল আলম বেন্টু। এতে আপত্তি জানিয়ে রিট করেন উম্মে রোমানের মালিক আনোয়ার হোসেন।

এই রিটের আদেশে আদালত তালাইমারি, কাজলা, বাজেকাজলা ঘাট ব্যবহার করে বালু উত্তোলন, মজুদ ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। জেলা প্রশাসনও অবৈধ ঘাটের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে দেন। আজিজুল আলম বেন্টু তখন বাধ্য হন ঘাট বন্ধ করে দিতে।

এক বছর পেরুতেই পুরোনো বালুমহালটি ইজারা পেয়েছেন রিটকারী সেই আনোয়ার হোসেন। জেলা প্রশাসন বালুমহাল ইজারা দিয়েছেন তার কাছে। এর পর তালাইমারি ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন, মজুদ ও পরিবহন শুরু করেছেন ঘাটটি বন্ধের জন্য রিটকারী রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালে আজিজুল আলম বেন্টু তার প্রতিষ্ঠানের নামে চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর বালুমহালটি দুই কোটি দুই লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন। আরেক বালু ব্যবসায়ী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন এ নিয়ে রিট করলে তার পক্ষে রায় দেন আদালত। ঘাটটি ব্যবহার করতে গেলে ২০১৯ সালে বেন্টুর চারজন ট্রাকচালক ও চারজন শ্রমিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডও দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর পর ২০২০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল হামিদ রেজুলেশন করে বালুমহালটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

কিন্তু ২০২১ সালে নতুন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল চরশ্যামপুর ও দিয়ার চরখিদিরপুর নামে পুরোনো বালুমহালটি ইজারা দেন। এবার সেগুলো ইজারা পান সেই রিটকারী আনোয়ার হোসেন।

বুধবার সরেজমিন তালাইমারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখনও নিষেধাজ্ঞাসংবলিত সাইনবোর্ড ঝুলছে। এতে লেখা আছে : ‘‘বিজ্ঞপ্তি : মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ৬৫২১/২০১৯-এর আদেশ মোতাবেক কাজলা মৌজা/কাজলা ঘাট ব্যবহার করে সকল ধরনের বালু উত্তোলন/বালু পরিবহন নিষিদ্ধ করা হলো। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে জেলা প্রশাসক।’’ যদিও এর পাশেই বিজিবি ক্যাম্পের পূর্বপাশে নদী থেকে বালু মজুদ করা হচ্ছে এবং ট্রাকে পরিবহন করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ইজারাদার আজিজুল আলম বেন্টু এ প্রসঙ্গে অভিযোগ করেন, ‘‘সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বৈধভাবেই বালুমহালটি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসক তখন নদীর ভেতর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ঘাট ব্যবহার করতে দেননি। আমার শ্রমিককেও কারাদন্ড দেওয়া হয়। অথচ যিনি আমার বিরুদ্ধে তালাইমারি ঘাট ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে রিট করে রায় পেলেন, তিনি এখন কীভাবে সেই অবৈধ ঘাট ব্যবহার করে বালু উত্তোলন, মজুদ ও পরিবহন করতে পারেন? অবৈধ বালুমহাল আবার বৈধ হলো কিসের জোরে? এতে তো উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও অমান্য করা হচ্ছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘একজন জেলা প্রশাসক যেখানে রেজুলেশন করে বালুমহাল এবং ঘাট বিলুপ্ত করেছেন, যার বিজ্ঞপ্তি এখনও বহাল, আরেকজন জেলা প্রশাসক সেই ঘাটকে নতুন করে কীভাবে ইজারা দেন?’’

বালুমহালের বর্তমান ইজারাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসকের টানানো বিজ্ঞপ্তিতে ভুল রয়েছে। অবৈধ বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। তবে ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন ও মজুদ নিষিদ্ধ নয়। নির্ধারিত বালুমহালের বালু যে কোনো ঘাট ব্যবহার করে উত্তোলন, মজুদ ও পরিবহন করা যাবে।’’

এ নিয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রশাসনের রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো সময় সিদ্ধান্তও বদলায়। আগের জেলা প্রশাসক বালুমহাল ও ঘাট বিলুপ্ত করেছিলেন। কিন্তু এখান থেকে সরকার বেশ ভালো রাজস্ব পাচ্ছে। এ নিয়ে এখানকার একাধিক পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। এখানে বালু পলিটিক্স দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে