মোহনপুরে চুন বানিয়েই জীবিকা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২১; সময়: ৬:৪২ অপরাহ্ণ |
মোহনপুরে চুন বানিয়েই জীবিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পান খাই গান গাই। তবে চুন ছাড়া পান খেলে মুখ পুড়ে থামতে গান। আর পানে খয়ের কুড়ার সঙ্গে চুন না মিশলে ঠোঁট হয়না লাল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পান খাদকদের ঠোঁট রাঙাতে চুন বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মোহনপুরের কয়েকটি পরিবার।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঝিনুকের চুন তৈরির বিস্তার লাভ করেছে। আর পেশাদার চুন তৈরি কারকরা সাধারণত ভুঁইমালী হিসেবেই পরিচিত। অনেক ভুঁইমালীরা পুর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছেন। অনেকে জীবিকার জন্য চুন তৈরীতে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাদেরই একজন জামাল উদ্দিন। যিনি প্রতিদিন স্থানীয় পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, ডোবা হতে ঝিনুক সংগ্রহ করেন। আর সে ঝিনুক পঁচানোর পর শুকিয়ে খাওয়ার চুন হিসেবে প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করে থাকেন। আর চুন তৈরির রোজগার হতেই চলে তার ৫ সদস্যের পরিবার। চুন তৈরির কারিগররা ভুঁইমালী নামে পরিচিত। এখানকার ভুঁইমালীরা তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্যগত চুন তৈরির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। নদ-নদীসহ গ্রামাঞ্চলের ডোবা-নালা থেকে সংগ্রহকৃত শামুক-ঝিনুকই যুগী চুন তৈরির মূল উপাদান।

আরো জানা যায়, মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বাকশৈল গ্রামের মৃত কুরু মালীর ছেলে প্রদীপ মালী বাড়ীতে চুন তৈরী করেন। চুন বানানো তাদের বংশ পরম্পরার পেশা। ছোট ছোট করে কাটা জ্বালানি কাঠের টুকরো বিছিয়ে তাতে কেরোসিন তেল ঢালা হয় আগুন জ্বালানোর জন্য। চুন তৈরির চুলাটি দেখতে ছোট্ট কূপের মতো। চুলার তলদেশে প্রথমে বিছিয়ে দেওয়া হয় ইট। পরে ইটের উপরে সাজানো হয় মাটির তৈরি ভাঙা পাতিলের টুকরা। কাঠে আগুন ধরে গেলে ধোঁয়া ওঠা চুলায় ঢালা হয় ঝুড়ি ঝুড়ি শামুকের খোসা। শামুকের পরতের উপরে আবার বিছানো হয় জ্বালানি কাঠ, তার উপর আবারও শামুক। জ্বালানি কাঠ আর শামুকের খোসায় চুলা ভরে গেলে নিচের গর্ত দিয়ে দিতে হয় একটানা বাতাস। বাতাস পেয়ে জ্বালানি কাঠের আঁচে স্তরে স্তরে পুড়তে থাকে শামুকের খোসা। আগুনের তাপে শামুকের খোসার ক্যালসিয়াম, কার্বোনেট ভেঙে তৈরি হয় ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা কুইক লাইম। পুড়ে যাওয়া খোসার কুঁড়ো চালুনি দিয়ে চেলে এরপর ঢালা হয় পরিষ্কার এক গর্তে। পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে ভালো করে ঘুঁটলে তৈরি হয় ক্যালসিয়াম হাইড্রো অক্সাইড নামের চুন।

চুন তৈরির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামের ২৫টি পরিবারের মধ্যে ২০ টিতে প্রতিদিন চুন তৈরি করা হয়। বাকি ৫টি পরিবারে সপ্তায় তিন থেকে চারদিন চুন তৈরি হয়। একটি বাড়িতে দিনে ১০০ থেকে ১২০ কেজি চুন তৈরি হয়। দিনে কমপক্ষে ১০০ কেজি চুন তৈরি হলে ১৫টি বাড়িতে প্রতিদিন ১৫শো কেজি চুন তৈরি হয়। মাসের হিসেবে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার কেজি অর্থাৎ ৪৫ মেট্রিক টন। ৩০ টাকা কেজি দরে চুন বিক্রি হয়। সে হিসেবে মাসে চুন বিক্রি দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর এক বছরের হিসেবে চুন বিক্রি দাঁড়ায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে