মেয়র আব্বাসকে খুঁজছে পুলিশ, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২১; সময়: ৩:৫০ অপরাহ্ণ |
মেয়র আব্বাসকে খুঁজছে পুলিশ, যেকোনো সময় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তির অভিযোগে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এক মামলায় গ্রেপ্তার করতে তাকে খুঁজছে পুলিশ।

তবে মেয়র আব্বাসের মামলার বিষয়ে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে মামলার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে পৌর মেয়র। তাকে খুঁজে বের করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মমিনের দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন বিতর্কিত মেয়র আব্বাস আলী।

এদিকে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি রেকর্ড করা হলেও নগরীর রাজপাড়া ও চন্দ্রিমা থানায় দাখিলকৃত একই আইনের পৃথক এজাহার এখনও রেকর্ড হয়নি।

অন্যদিকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ জন্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদকসহ পাঁচ আইনজীবীকে পৌর মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলার অবস্থা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আরটিভি নিউজকে বলেন, মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা আমলে নেওয়া হয়েছে।

পৌর মেয়র গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্য তার।

এতে তার দোষ প্রমাণিত হয়েছে। মেয়র আব্বাসের গ্রেপ্তারের জন্য দুটি আলামতই যথেষ্ট। একটা হচ্ছে- অডিও ক্লিপ ও দ্বিতীয়টি তার ফেসবুকে এসে মাফ চাওয়া। এই দুটি জিনিসই যথেষ্ট।

ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তার অবস্থান খোঁজার জন্য আমরা সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা নিচ্ছি। আশা করছি যেকোনো মুহূর্তে মেয়র আব্বাসকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।

মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে পৌরসভার কাউন্সিলরদের প্রদান করা অনাস্থাপত্র মামলার কাগজ হাতে পাওয়ার বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের প্রদান করা অনাস্থা পত্র ও পৌরসভার রেজুলেশনের কাগজাদি তিনি গ্রহণ করেছেন। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

তিনি (প্রশাসক) আরও বলেন, মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার কাগজও হাতে এসেছে।

সেটির একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশনা আশার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ বলেছেন, আব্বাসকে রাজশাহী জেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকালে ডাকযোগে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে গত সোমবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে পৌর মেয়র আব্বাসের কটূক্তিমূলক বক্তব্য অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই গেটটি দ্রুত নির্মাণ হবে।

তবে আমরা যে ফার্মকে কাজটি দিয়েছি, তারা গেটের ওপরে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল বসানোর ডিজাইন দিয়েছে, সেটি ইসলামী দৃষ্টিতে সঠিক না। তাই আমি সেটিকে বাদ দিতে বলেছি।’

আরও শোনা গেছে, ‘যেভাবে বুঝিয়েছে তাতে আমার মনে হইছে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়ে যাবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে।

ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না! বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে যাইয়া নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি শিওর।’

এই ঘটনার পর থেকে রাজশাহীতে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল, কুশপুতুল দাহ, অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছে বিক্ষুব্ধরা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে