বাগমারায় নিম্নমানের ধান বীজ কিনে প্রতারিত কৃষকদের সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় ব্রি ধান-৭৫ এর বীজ ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হয়েছে উপজেলার অর্ধশত কৃষক। প্রতারণার শিকার ওই সকল কৃষকরা নিরুপায় হয়ে বীজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
প্রতিকার না পেয়ে সোমবার বাগমারা প্রেসক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী কৃষকরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার কৃষকরা বলেন, আমরা উপজেলার শিকদারী বাজারের গ্রাম বাংলা বীজ ভান্ডার-২ এর মালিক মাহামুদ, একই বাজারের দেলোয়ার এবং কাঁঠালবাড়ি বাজারের সুমন ট্রেডার্সের নিকট থেকে প্রায় সাড়ে ৪ মাস পূর্বে উচ্চ ফলনসীল ব্রি ধান-৭৫ এর বীজ ক্রয় করি। সেই বীজ যথা সময়ে চারা উৎপাদনের জন্য বীজ তলায় বপন করি। আশানুরুপ বীজ হওয়ার পর সেটা জমিতে রোপণ করা হয়। রোপনের সাড়ে তিন মাস পার হলেও ধানের কোন শীষ বের হয়নি।
এতে আমরা হতাশ হয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট ওই সকল বীজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। অভিযোগ পাওয়ার পর কৃষি কর্মকর্তা ওই সকল বীজ বিক্রেতাকে নোটিশ প্রদান করেন। এছাড়াও জেলা কৃষি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জমির ধান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তাগণ রোপিত ধানের কোন জাত নির্ধারণ করতে পারেননি।
এ ঘটনায় স্থানীয় ভাবে তিন বার বসা হলেও সেটার কোন সমাধান হয়নি। দিনে পর দিন শুধুই কালক্ষেপন করে চলেছেন নিম্ন মানের মানহীন ওই সকল বীজ বিক্রেতারা। অবশেষ সোমবার সকালে ওই তিন বীজ বিক্রেতা সহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হন। উভয়ের উপস্থিতিতে কৃষকদের বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেন কৃষি কর্মকর্তা। পরবর্তীতে কৃষকদের ৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন বীজ বিক্রেতারা।
জানাগেছে, ‘মাস্টার সীড কোম্পানী লিঃ’ এর মানহীন বীজ বিক্রয়ের সাথে জড়িত ওই সকল বীজ বিক্রেতা। কোম্পানীর সাথে যোগসাজসে দীর্ঘদিন থেকে নিম্নমানের মানহীন ধান বীজ বিক্রয় করে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করে আসছে তারা। কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ওই কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে কৃষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুর রহিম, মাহমুদ হাসান, আব্দুল্লাহ (পিন্টু)। তারা দাবী করেন, মাড়িয়া, যোগীপাড়া এবং হামিরকুৎসা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা ওই সকল বীজ ক্রয় করে ধান চাষ করে। তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে নিম্নমানের ব্রি ধান-৭৫’ চাষ করেছে কৃষকরা। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতির মূখে পড়েছে কৃষকরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কৃষকদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা কৃষি অফিস থেকে এরই মধ্যে তদন্ত করে প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রয়োজনীয় ক্ষতি পূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট বীজ বিক্রেতাদের বলা হয়েছে। ক্ষতি পূরণ দেয়া না হলে কোম্পানী সহ ওই সকল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।