আরএমপির টার্মিনাল বক্সে সেদিন যা ঘটেছিল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১; সময়: ১০:২৪ অপরাহ্ণ |
আরএমপির টার্মিনাল বক্সে সেদিন যা ঘটেছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্সে যাত্রীকে জিম্মি করে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনায় পুলিশের ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। গত বুধবার রাতের এই ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন পুলিশ কমিশনার।

সূত্র মতে, কুমিল্লা থেকে খোরশেদ গাজী (৪৩) রাজশাহীর একটি আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন। সাথে ছিল তার ভাগ্নে মো. শাহীন (৩২)। খোরশেদ গাজী পেশায় একজন স্যানিটারি মিস্ত্রী এবং শাহীন রাস্তায় রাস্তায় মাইকিং করে ইঁদুর মারা বিষ বিক্রি করেন। এই শাহীনকেই পুলিশ বক্সে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খোরশেদ গাজী জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলা থেকে খোরশেদ খালাস পান। ওইদিন তার এক পরিচিত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত থাকায় আদালত শেষে তাকে দেখতে যান নওগাঁয়। ২২ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে নওগাঁ থেকে হানিফ বাসে রাজশাহী বাস টার্মিনালে নামেন খোরশেদ গাজী ও শাহীন।

বাস থেকে নামতেই টার্মিনাল বক্সের এএসআই সেলিম কয়েকজন কন্সটেবল সাথে করে খোরশেদ ও শাহিনকে আটক করেন। শাহীনের বুকের কলার ধরে নিয়ে যেতে থাকেন পুলিশ বক্সের দিকে। এ সময় ভয়ে পালিয়ে যান খোরশেদ গাজী।

এএসআই সেলিম সহ পুলিশ বক্সে থাকা অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা সেলিমকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। শাহীন নিজের আর্থিক অবস্থার বিবরণ দিলে, দর কমিয়ে আনে পুলিশ বক্স এর সদস্যরা। ২০ হাজার টাকার মুক্তিপণ নেমে আসে ১০ হাজার টাকায়। এক পর্যায়ে ছয় হাজার টাকা দেয়ার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হবে বলে শাহীনকে জানানো হয়। একই সাথে বলা হয় খোরশেদ গাজীকে কল করে ডেকে এনে ধরিয়ে দিলে দুই হাজার টাকা বকশিস দেয়া হবে।

শাহীন নিজের পকেটে থাকা এক হাজার টাকা দিয়ে দেয় এবং পকেটে আর টাকা না থাকায় দেশের বাড়িতে ফোন দিয়ে বাকি টাকা দিতে বলেন শাহীন। এএসআই সেলিম পুলিশ বক্সের পাশে অবস্থিত মোস্তাক টেলিকমের একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলেন এই নাম্বারে টাকা পাঠাতে।

শাহীনের বাড়ি থেকে সেই নম্বরে চার হাজার ৬০০ টাকা ক্যাশ আউট করা হয়। পুলিশ বক্স এর সদস্যরা সেই টাকা তুলে নিয়ে আসেন। এরপর ঘটনার সামনে আসেন পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এটিএসআই নাসির। টাকা পেয়ে নাসিরের নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয় শাহীনকে। বাড়ি ফেরার জন্য শাহীনের পকেটে গাড়ি ভাড়া না থাকায় পুলিশের কাছে অন্তত গাড়ি ভাড়াটুকু ফেরত দিতে অনুরোধ করেন।

এসময় এএসআই সেলিম শাহীনকে গালি দিয়ে জানান, টাকার ভাগ উপর মহলকেও দিতে হয়। ছাড়া পেয়ে শাহীন মোবাইলে খোরশেদ গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করে একত্রিত হন। খোরশেদ গাজী ভাগিনার কাছ থেকে পুরো বিষয়টা শোনার পর ৯৯৯ এ কল করেন।

এরপর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মন ভিকটিমদের সাথে কথা বলেন। ভিকটিমরা ভয় পেলেও তাদের আশ্বস্ত করেন ওসি। এক পর্যায়ে ভিকটিমরা ঝামেলার ভয়ে ভয়ে ন্যাশনাল গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যাচ্ছিলেন।

তবে বোয়ালিয়া থানার ওসি গাড়িটিকে ফিরিয়ে আনেন। ভিকটিমদের কাছ থেকে পুরো ঘটনার শোনেন এবং আরএমপি’র হাইকমান্ডকে জানিয়ে দেন। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার খোরশেদ গাজী বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

ঘটনা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শিরোইল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এটিএসআই নাসির, এএসআই সেলিম সহ পুলিশ বক্সের কনস্টেবল শঙ্কর, শাহ আলম, সারওয়ার ও রিপন আলীকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করেন পুলিশ কমিশনার। পরে বোয়ালিয়া থানার ওসি ভিকটিমদের সম্মানের সাথে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে ঢাকা গামী একটি গাড়িতে তুলে দেন।

ফিরে যাবার সময় খোরশেদ গাজী বলেন, পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতাম না। তবে সাধারণ মানুষকে এভাবে যাতে আর হয়রানি করা না হয় সে কারণেই অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি।

মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুহুল কুদ্দুস জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনার সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদেরকে সায়মিক রাখাস্ত করা হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে