গোদাগাড়ীতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎ শিল্প

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১; সময়: ১:৫০ অপরাহ্ণ |
গোদাগাড়ীতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎ শিল্প

মুক্তার হোসেন, গোদাগাড়ী : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎ শিল্পী। কিন্তু অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন মৃৎ শিল্পীরা একসময় কুমার পাড়াগুলো মাটির কাঁচা গন্ধে থাকত মাতোয়ারা।

ব্যাস্ত কুমাররা হিম- শিম খেতেন চাহিদা মেটাতে। হাট বাজারে মাটির তৈজসপত্রের পসরা সাঁজিয়ে বসতেন মৃৎ শিল্পিরা। নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ছাড়াও শিশুদের খেলনা, সৌন্দর্য বর্ধন সামগ্রীসহ বিভিন্ন বাহারি মাটির তৈজসপত্র থাকত কুমারপাড়া। তখনকার প্রতিযোগিতার বাজারে বস্তুকে আকর্ষিত করতে দৃষ্টিনন্দিত আলপনার ছোঁয়াও দেওয়া হত।

কিন্তু আজ এ সকল সবই অতীত হয়ে যাচ্ছে। গাঁয়ের কুমার পাড়ায় আর কাঁচা মাটির গন্ধ পাওয়া যায় না। আধুনিক সব প্রক্রিয়াজাত থালা বাসন আর প্রয়োজনীয় বস্তুতে হারিয়ে গেছে মাটির গন্ধ।গোদাগাড়ী উপজেলা ইতিহাস ঐহিত্য নিয়ে গঠিত উপজেলা। এই উপজেলায় নানান ইতিহাস লুকিয়ে আছে। এদের মধ্যে মৃৎ শিল্পের অবদানও অন্যতম।

সময়ের পরিক্রমায় মৃৎ শিল্পের অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও প্রায় দুই শতাধিক পরিবার এখনো এই শিল্পের সাথে জড়িতে থেকে বাপ দাদার পেশা ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছে। এমনি পরিবার দেখা মিললো উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, কাঠাল বাড়ীয়া, খেতুর, বালিয়াঘাট্টাসহ কয়েকটি গ্রামে।

ডুমুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা মিললো শ্রী উত্তম কুমার পালের সঙ্গে। দুপুর গড়ালেও মাটির তৈজসপত্র তৈরীরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাকা ঘুরিয়ে শিল্পীর নিপুন হাতে তৈরী করছেন হরেক রকমের পাতিল। একবাড়ীতে একাধিক জন আবারও কখনো বাড়ীর মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে কাজ করে সহযোগিতা করছেন।

মৃৎ শিল্পীরা জানান ৩০-৩২ বছরেরও অধিক সময় ধরে এই শিল্পের সাথে জড়ীতে থেকে পেশাটিকে ধরে রেখেছে। অনেক কষ্ট করে হলেও এই পেশা ধরে রেখেছে অন্যকোন কাজ তেমন না জানায়। কিন্তু আধুনিকাতর ছোয়ায় প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে মাটির পাতিলের চাহিদা কমে গেছে।

ফলে এক রকম ঢিলেঢালা ভাবেই ব্যবসায় করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। বাবার রেখে যাওয়া পেশা ধরে রেখেছেন শ্রী কৃষ্ণ মেনন পাল।

তিনিও জানান, প্লাস্টিক আর বাড়ী বাড়ী ফ্রিজের ব্যবহারের কারণে থালা, কলস এসব পাত্রের আর চাহিদা নেই। দইয়ের কাতারী আর রুটি তৈরীর খোলা তৈরী করে আয় করছেন তারা। এসব তৈরী কৃত মালামাল পাইকারি দরে বাসা হতেই নিয়ে যায় মহাজনরা। বাবা মায়ের বাড়ী হতে শিখে আসা কাজ স্বামীর সংসারে এসেও করে চলেছে শ্রী কৃষ্ণ মেনন পালের স্ত্রী রাজকুমারী পাল।

তিনি জানান, পুরষের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন সংসারে। আগে মাটির পাত্র তৈরী করতে আশেপাশের ডোবা নালা হতে মাটি বিনা পয়সায় নিয়ে এসে তৈরী করতেন তবে বর্তমান সময়ে এই মাটিটুকুও কিনতে হয় তাদের। ফলে তাদের পরিবার নিয়ে কোন রকম দিন চলে যাচ্ছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, উপজেলায় ২১৮ জন মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত আছে এমন চিহিৃত করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতো মধ্যে ২৭ জন মৃৎ শিল্পী প্রত্যেকে ১৮ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে যাতে তারা এই পেশায় বিদ্যমান থাকে।

রাজশাহী জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ জানান, আমাদের দপ্তর হতে কুমোর অর্থাৎ মৃৎ শিল্পসহ ৬টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প নামে কাজ করে যাচ্ছি। তাদের স্বল্প কালিন প্রশিক্ষণ ও এক কালিন ১৮ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়ে তাদের পেশা ধরে রাখার জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য আধুনিকাতর সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উৎপাদনের জন্য তাদের বলা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে