রাজশাহীতে বৃক্ষ সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীকে ছয় নাগরিকের স্মারকলিপি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১; সময়: ৫:৪০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে বৃক্ষ সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীকে ছয় নাগরিকের স্মারকলিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলোকে নিধন নিষিদ্ধ করে সেগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন রাজশাহীর সচেতন ছয় নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তারা স্বারকলিপি প্রদান করেন।

স্বারকলিপি প্রদানকারীরা হলেন, শামীউল আলীম শাওন, ফাতেমা আলী মেঘলা, শাওন ইসলাম, শান্তা ইসলাম, রিনা আক্তার ও মোসাঃ সুকতারা। স্বারকলিপিতে তারা নিজেদের পরিচয় হিসেবে নাগরিক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ লিখেছন এবং নিজেদের জাতীয় পরিচয় পত্র ও মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন।

তিনদফা দাবি সম্বলিত স্বারকলিপিতে তারা বলেছেন, সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও নির্মল বায়ুর স্বাস্থ্যকর শহর রাজশাহী। রাজশাহীর সৌন্দর্যের অন্যতম অনুসঙ্গ সবুজ বৃক্ষ আর পাখি। সবুজ ও নান্দনিক এ নগরীতে হাজারো পাখির বসবাস। যার অধিকাংশেরই আবাসস্থল নগরীর বুকে মাথা উচু করে থাকা বিভিন্ন প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষে। তবে নগরায়ণের বলি হচ্ছে এসব প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো। তাই এক রকম যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে পাখিদের।

অনেক সময় গাছের সঙ্গে চলে পাখি নিধনের উৎসব বলে উল্লেখ করে তারা স্বারকলিপিতে বলেছেন, ‘গত ০৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ড্রেন নির্মাণের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে থাকা অর্জুনসহ প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বেশকিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে গাছ কাটা হলে মাটিতে আছড়ে পড়ে শাবকসহ শতাধিক পাখি মারা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন উৎসুক মানুষ কিছু বড় পাখি নিয়ে পালিয়ে যায়।

এছাড়া হাসপাতালের নির্মাণ শ্রমিকরাও জবাই করেছেন প্রায় ২০ থেকে ২৫টি শামুখখোল পাখি। এ সময় ৩০টির বেশি বাচ্চা শামুখখোলের মৃত্যু হয়। এছাড়াও গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ইং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে প্রায় সাত বছরের অধিক সময় ধরে বসবাস করে আসা পাখি তাড়াতে শতাধিক গাছের ডালপালা কেটে ফেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও বিগত ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের দিকে রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমী নির্মাণের জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় থাকা অর্ধশতাধিক ঐতিহ্য বহনকারী প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট) কর্তৃপক্ষের শুরু করা অর্ধ শতাব্দী পুরনো গাছ কাটার ঘটনাকে অনেক বেশী কষ্টদায়ক বলে জানান।

তারা স্বারকলিপিতে আরো বলেন, ২০১৬ সালে জাতিসংঘের বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে বিশ্বের সবচেয়ে দূষণমুক্ত শহর হিসেবে রাজশাহীর নাম উঠে আসে। গাছ কাটার মহোৎসবে সেখানকার পরিবেশে আজকাল নিঃশ্বাস নেওয়াও কষ্ট কর হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চল নয়, বরং দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

অথচ আজ বিভিন্ন অজুহাতে নির্বিচারে মানুষজন প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহীসহ সবধরণের গাছপালা কেটে ফেলছেন। ফলে প্রাণবৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে বলে তারা প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় এখনই এসব প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ কাটা বন্ধের পাশাপাশি সেগুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদানকৃত স্বারকলিপিতে তাদের জানানো তিন দফা দাবিগুলো হলো-

১। রাজশাহীসহ বাংলাদেশের অভ্যান্তরে থাকা সকল প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলোকে সঠিকভাবে সনাক্ত বা চিহ্নিত করে সেগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে হবে।

২। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলোকে নিধন নিষিদ্ধ করে সেগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।

৩। বৃক্ষনিধন রোধে ও বৃক্ষরোপণে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে বৃক্ষরোপনকারীদেরকে পুরস্কার প্রদান এবং বৃক্ষনিধনকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

  • 27
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে