চরম সংকটে রাজশাহীর জুয়েলার্স কারিগররা

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১; সময়: ৮:২৭ অপরাহ্ণ |
চরম সংকটে রাজশাহীর জুয়েলার্স কারিগররা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর মোহনপুরে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন চার শতাধিক জুয়েলার্স কারিগর। লকডাউনের কারণে বাজারজাত হচ্ছেনা তাদের হাতের নিপূণ তৈরি স্বর্ণাঙ্কার। এজন্য কারিগরদের কাজ দিতে পারছেন না মালিকপক্ষরা।

এজন্য সংসার যাপনে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন অধিকাংশ কারিগররা। জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে সর্বাধিক জুয়েলারী কারিগর রয়েছেন মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে। এর মধ্যে কেশরহাটে কর্মরত রয়েছেন তিন শতাধিক।

বাকিরা উপজেলার মৌগাছি, গোছা, কামারপাড়াসহ বিভিন্ন হাটবাজার মোড়ে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে বাড়িতে কাজ করেন প্রায় অর্ধশতাধিক নারী কারিগর। যারা বাড়িতে বসেই চেইনমালা, নুপুরসহ বিভিন্ন ধরণের জুয়োলারী অলঙ্কার বানিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২শ টাকা থেকে ৩শ টাকা রোজগার করে সংসারের হাল ধরতে সহযোগিতা করে থাকে। গত বছরের লকডাউন পরিস্থিতেই তারা অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। সে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার আগেই এবারের লকডাউন পস্থিতির শিকার হয়ে পড়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে স্বর্ণকারদের মাঝে অর্থনৈতিক যৌলস ছিল। পরবর্তীতে বিশ্বব্যপি অর্থনৈতিক মঙ্গা ও সোনার দাম অধিক বৃদ্ধির কারণে বড় ধরণের গহনা তৈরির সংখ্যা অর্ধেক পরিমাণে কমে গেছে। তার পরও বিশ্বব্যপি ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার জন্য দেশে কোনো অঞ্চলে অলঙ্ককারাদির চাহিদা নেই। এছাড়াও লকডাউন পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণশিল্পে ধস নেমেছে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে একজন কারিগর তার রোজগারের টাকায় চালান চার থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবার। এসব পরিবারগুলো অর্থনৈতিক দৈন্যতায় ভুগছেন।

অর্থনৈতিক দৈন্যদশার বর্ণনা করেছেন কেশরহাট বাজারের কামরুল ইসলাম নামে একজন স্বর্ণ কারিগর। তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জুয়েলারী ব্যবসায় ধস নেমেছে। এজন্য অনেকে সংসারের খরচ চালাতে হিমসিম খেয়ে বাড়ির নারীদের অলঙ্কার তৈরির কাজে লাগিয়েছেন। এই দিয়ে সংসার কোনো মতে চালিয়ে আসছিলেন। গত বছরের লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে সংসার যাপনের পাশাপাশি ঋণের কিস্তি চালাতে না পেরে রাতের আঁধারে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আত্মনিয়োগ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতে আমার সংসার চালানো দূরুহ হয়ে পড়েছে।

আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী শাহিন আলম বলেন, লকডাউনে আমাদের মালামাল সঠিক সময়ে পেতে বিলম্ব হচ্ছে। পূর্বের তুলনায় গ্রহকের সংখ্যাও কমেছে। আমরা চাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকল প্রতিষ্ঠান চালু করে দেওয়া হোক। তাছাড়া আমিসহ আমার দোকানের কারিগররা চরম বিপদে পড়বে।

জানতে চাইলে কেশরহাট বাজার জুয়েলার্স কারিগর সমিতির সভাপতি বাবর আলী মাস্টার জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের জুয়েলার্স কারিগররা অনেকটায় অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন। ইতোমধ্যে এপেশার পাশপাশি সহযোগি পেশায় কাজ করছেন।

মালিক সমিতির সভাপতি প্রভাষক খুশবর রহমান বলেন, গ্রামাঞ্চলে চাকরীজীবি মানুষের সংখ্যা অনেকটায় কম। কৃষি এবং ব্যবসা পেশায় কর্মরত মানুষের সংখ্যায় বেশি। দাম বৃদ্ধির কারণে স্বর্ণশিল্পে অনেক দিন ধরে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে করোনাকালিন পরিস্থিতে আমরা কোনো গহনা দেশের অনত্র বিক্রি করতে যেতে পারছিনা। এজন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরদের উপর প্রভাব পড়েছে। সবমিলে আমাদের স্বর্ণশিল্পে করুন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে