পলান সরকারের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১; সময়: ৮:২২ অপরাহ্ণ |
পলান সরকারের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : নীরবে নিভৃতে বই বিলি করতেন পলান সরকার। স্থানীয় লোকজন তাকে বলতেন বইপ্রেমী। এই কাজ করতে করতেই এক সময় সারা দেশের মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠলেন আলোর ফেরিওয়ালা। রোববার (১ আগস্ট) তাঁর জন্মের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’-গানের মাধ্যমে তাঁর এই কাজের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেন করা হয়। বক্তারা পলান সরকারের রেখে যাওয়া সত্যসুন্দরের আলোক প্রজ্জ্বলিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

রোববার বিকেলে ভার্চ্যুয়ালি প্রথম আলোর রাজশাহী বন্ধুসভা আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের ফেসবুকে পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রারিত হয়। একই সময়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামে অবস্থিত পলান সরকার পাঠাগারে সামাজিক দূরত্ব মেনে সীমিত পরিসরে পাঠক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানটিও জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়।

ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকার মলয় ভৌমিক। এছাড়া আলোচানায় অংশ নেন পলান সরকার পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মো. হায়দার আলী, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, কলেজ শিক্ষক গোলাম তোফাজ্জল কবির, সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তানজিলা জিনাত।

এতে সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলোর রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি বেলাল হোসেন। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফারুক হোসেন। পলান সরকারের পাঠাগার থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন পাঠাগারের সভাপতি মোজাফফর হোসেন, বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী, দিঘা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী, বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পলান সরকার একটি নিভৃত গ্রাম থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে এই জন্যই যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষের সকল মানুষের সংস্কৃতির একটি মেলবন্ধন তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন। সেখানে সত্যসুন্দরের প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, সেটাই ছিল জ্ঞানের আলো। মানুষের বাড়ি বাড়ি পায়ে হেঁটে তিনি সেই আলো বিলিয়ে গেছেন।

১৯২১ সালের এই দিনে পলান সরকার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর মালঞ্চী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পলান সরকারের কেতাবি নাম হারেজ উদ্দিন। কিন্তু তিনি পলান সরকার নামেই তিনি পরিচিতি পান। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

২০০৭ সালে সরকারিভাবে তাঁর বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়েছে। গত বছর (২০২০ সালে )অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য ইংরেজি বই ইংলিশ ফর টুডে-তে ‘আ টর্চ বেয়ারার’ শিরোনামে পলান সরকারের সংক্ষিপ্ত জীবনী অন্তর্ভক্ত হয়েছে।

২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে প্যারিস–ভিত্তিক একটি সংগঠন ‘স্পার্ক নিউজ’ ইতিবাচক উদ্যোগের ওপরে লেখা আহ্বান করে। বাংলাদেশ থেকে প্রথম আলো ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ শিরোনামে পলান সরকারের বই পড়ার আন্দোলন নিয়ে লেখা পাঠায়। ২০ সেপ্টেম্বর লেখাটি সারা পৃথিবীর ৪০টি প্রধান দৈনিকে ছাপা হয়। এর মধ্যে ১০টি পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয় আলোর ফেরিওয়ালা।

প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৪ সালে পলান সরকারকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়। ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ছুটির দিনে’ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’। এটিই তাঁকে নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদন। এর আগে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। ২০১৯ সালের ১ মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান পলান সরকার।

  • 114
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে