চারঘাট উপজেলায় ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রামন, টিকা নিতে আগ্রহী সাধারন মানুষ

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১; সময়: ৫:১১ অপরাহ্ণ |
চারঘাট উপজেলায় ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রামন, টিকা নিতে আগ্রহী সাধারন মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট : রাজশাহীর চারঘাটে ক্রমেই বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রামন। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬শত ৮৩ জন করোনা রোগী সণাক্ত হয়েছে, মারা গেছে প্রায় মোট ৭ জন করোনা রোগী। বর্তমানে ১৯৫ জন বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। টেষ্টের অনুপাতে কখনও কখনও এই সংক্রামনের হার প্রায় ৩৫% উপরে বলে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, দেশে করোনা সংক্রামনের প্রথম ঢেউ মার্চ’২০ শুরু হলেও উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী চিহ্নিত হয় ২৭শে মে’২০ । প্রথমদিকে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কয়েকটি গ্রামে হাতে গোনা কয়েকজন করোনা সংক্রামন রোগী ছিল। কিন্তু দেশে ২০২১ সালে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পরে উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কম বেশি করোনা সংক্রামন রোগী বৃদ্ধি পেতে থাকে। সংক্রামনের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, উপজেলার মোক্তারপুর, থানাপাড়া, ঝিকরা, চারঘাট, ফকিরপাড়া, ইউসুফপুর, হলিদাগাছি, বামনদিঘী ইত্যাদি গ্রাম। ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় অতি মাত্রায় এই সংক্রামনের বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন চারঘাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হক।

প্রথমদিকে সাধারন মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রবণতা কম দেখা গেলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এ সংক্রামন ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে বিভিন্ন কম্পিউটার দোকান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে টিকা রেজিষ্ট্রেশনের জন্য সাধারন জনগন ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও টিকা নিতে হাসপাতালে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে সাধারন মানুষদের। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র সূত্রে জানা গেছে এ পর্যন্ত আনুমানিক ৯ হাজার জন টিকা নেয়ার জন্য অনলাইন রেজিষ্ট্রেন করেছেন। এর মধ্যে উপজেলার প্রায় ৪ হাজার জন ডবল ডোজ টিকা নিয়েছেন বলে জানা যায়।

দ্বিতীয় ঢেউ এর শুরু থেকে প্রশাসনের তৎপরতায় লকডাউন কড়াকড়ি ছিল। বিধি নিষেধ মেনে মানুষজন অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হতো না। লকডাউন শিথীল হওয়ার পরে রেডজোন চিহ্নিত ঢাকা ও এর পাশর্^বর্তী জেলাগুলো থেকে অবাধে লোকজন ফেরত আসতে শুরু করে। সরকারী বিধিমালা অনুযায়ী হুমকোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেউ মানছেন না। অবাধে বিচরণ করছেন পাড়া-মহল্লা, বাজার ও রাস্তাঘাটে। শুধুমাত্র মুদি, কাচাঁবাজার ও ঔষুধের দোকান খোলা থাকার নির্দেশনা থাকলেও বিধি নিষেধ অমান্য করেই খোলা রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের অন্যান্য দোকানপাট।

লকডাউন সফল করতে প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ টহলদল উপজেলার বিভিন্ন বাজার, মোড় ও প্রধান প্রধান রাস্থাঘাটে টহল দিতে দেখা গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমান করা হয়েছে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নির্দিধায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সারদা বাজারের একজন ক্রেতা আওয়াল। কেউ কেউ বলছেন প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার জন্যই ভয়ানক হচ্ছে উপজেলার করোনা পরিস্থিতি। গ্রাম ও ওয়ার্ড ভিত্তিক নাম মাত্র করোনা সংক্রামক প্রতিরোধ কমিটি থাকলেও চোখে পড়ে না তাদের কোন কার্যক্রম। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর না হলে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে বলে ব্যক্ত করেন স্থানীয় সচেতনমহল।

এপ্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, করোনা প্রতিরোধ ও জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা পালনের জন্য প্রতিটি গ্রামে ও ওয়ার্ডে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের হুম আইসুলেশন রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। চলমান লকডাউনে গত ৭ দিনে বিধি নিষেধ অমান্য করে দোকান খোলায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রায় ১৬টি মামলায় ৩৫ হাজার একশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। প্রয়োজনে করোনা উপস্বর্গ থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে টেষ্টের জন্য রামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প:প: কর্মকর্তা ডা: আশিকুর রহমান বলেন, সারা দেশের ন্যায় এই উপজেলায় প্রতিদিনই টেষ্টের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত নতুন রোগী সণাক্ত হচ্ছে। অধিকাংশ করোনা পজিটিভ রোগী হুম আইসোলেশানে থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। প্রতিবেশিদের বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। বাড়ি থেকে প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সুস্থ আছে ।

  • 212
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে