রাজশাহীর বালুদস্যুদের দাপটে অসহায় প্রশাসনও

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২১; সময়: ২:৪৯ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর বালুদস্যুদের দাপটে অসহায় প্রশাসনও

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর মধ্য শহর তালাইমারী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এর আগে একাধিকবার পদ্মাপাড়ের এই পয়েন্টটিতে অভিযান পরিচালনা করে ঘাটটি বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। এর পরও থামেনি এখানে অবৈধ বালুকারবার।

তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ প্রশাসকের দপ্তরে। অভিযোগগুলিতে বলা হয়েছে, তালাইমারী পয়েন্টে কোন বৈধ বালুঘাট বা বালুমহাল নেই। এর পরও প্রশাসনের নাকের ডোগায় বালুদস্যুরা সেখানে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। এসব বালুদস্যুদের কাছে এখন অসহায় এলাকাবাসীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তালাইমারী ঘাটে বালুর পাহার তৈরী করা হয়েছে। দিন-রাত ড্রেজিং করে পাইপের মাধ্যমে সেখানে বালু মজদ করা হয়েছে। আর ঠিক সন্ধ্যা হলেই সারি সারি ট্রাক সেখান থেকে বালু পরিবহন করছে। ভোর পর্যন্ত চলে বালুদস্যুদেও এই বালু লুটের এই মহোৎসব। নদীর ৬ কিলোমিটার ভাটিতে একটি বালুমহালের ইজারাদার নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন তার নির্ধারিত এলাকার বাইরে দিয়ে এভাবে বালু লুট করছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

অভিযোগগুলিতে বলা হয়েছে, নগরীর তালাইমারী নগরীর মধ্য শহরের একটি পয়েন্ট। ঘন জনবসতিতে পূর্ণ। পদ্মার বাঁধ কেটে নিজেরা সড়ক বানিয়ে একদল বালুদস্যু কয়েক মাস আগে তালাইমারী দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগে পেয়ে জেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তা বন্ধ করা হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে নোটিশ লাগিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়।

কিছুদিন বন্ধ থাকার পর বালুদস্যুরা আবার রাতের আঁধারে বালু লুট শুরু করে। পদ্মায় পানি আসায় বর্তমানে বালু মজুদ করা হয়েছে পাড়ে। এলাকাবাসী তাদের বাধা দিতে গেলে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী তাদের এখন বাধা দিতে সাহস পাচ্ছে না।

ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর বুক থেকে বালু তুলে জমা করছে পাড়ে। ভেক্যু দিয়ে ওই বালু ট্রাকে ভরছে। এসব বালু নগরীর বিভিন্ন সড়ক ধরে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। এভাবে শত কোটি টাকার বালু লুট হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা নিয়েছে। এ কারণে এলাকাবাসী ও অন্য বালুমহালের ইজারাদাররা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক ও পুলিশের কাছে এশাধিক অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকা দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোপূর্বে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন এই রিট করেছিলেন। উচ্চ আদালত তালাইমারীতে কোনো বালুঘাট না থাকায় তা বন্ধের আদেশ জারি করেন। কিন্তু সেই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল চিহ্নিত বালুদস্যু উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই পদ্মার বুক থেকে অবাধে বালু লুট করছে।

তালাইমারী ঘাট এলাকার বাসিন্দা মোহা. রমজান আলী অভিযোগে বলেন, সন্ধ্যা হলেই তালাইমারী ঘাট চলে আসে ট্রাক, ট্রাক্টও, ডাম্বার ও ভেক্যু। ভোর পর্যন্ত চলে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারবার। অর্ধশত সারারাত ট্রাক চলাচল, পেলুডার মেশিন ও স্কেভেটরের শব্দে পদ্মার পাড়ের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এয়াড়াও পদ্মাপাড়ে বালু মজুদ করায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে এলাকাটি। এ নিয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

রমজান বলেন, প্রশাসনকে অভিযোগ দিলে তারা বলে থাকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপেক্ষা করেন। তবে তারা আর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তালাইমারী নগরীর একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখান দিয়ে বালু উত্তোলনে মানুষের জীবনযাপন সমস্যায় পড়ছে।

  • 156
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে