করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২১; সময়: ২:১৬ অপরাহ্ণ |
করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির কারণে গত এক বছরের বেশি সময় থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সে সুবাধে পুঠিয়া উপজেলার বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো খোজও নেন না শিক্ষকগণ। যার কারণে ওই এলাকার লোকজন প্রতিষ্ঠান গুলোতে গরু-ছাগলের চরণভূমি ও গোয়াল ঘর হিসাবে ব্যবহার করছেন। সেই সাথে রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে প্রতিষ্ঠানের আসবপত্র ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, তদারকির অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে চলে অসামাজিক কাজ ও মাদকের আড্ডা।

উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট কলেজের সংখ্যা ১৮ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮ টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৯ টি এবং মাদ্রসা রয়েছে ১৪টি। এ সকল প্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের অধিক রয়েছে। এছাড়া ব্যাক্ত মালিকানা প্রাইভেট কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে প্রায় ২৫ টি।

শনিবার সকালে উপজেলার প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের তদারকির অভাবে শ্রেণিকক্ষ গুলো জরার্জীণ অবস্থায় পড়ে আছে। সকল শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষা উপকরণ গুলোতে ধুলা-বালিতে আচ্ছন্ন। প্রতিষ্ঠানের বারান্দা গুলোতে এলাকার লোকজন গরু-ছাগল বেধে রেখেছেন। আবার অনেকই তাদের ফসল রাখার উঠান হিসাবে ব্যবহার করছেন।

ধোপাপাড়া এলাকার তারেকুজ্জামান নামের একজন অভিভাবক বলেন, করোনা মহামারির কারণে এক বছরের বেশী সময় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রয়েছে। ঘরে বসে নিয়মিত বেতন পেলেও শিক্ষকরা আর প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেয় না। অপরিষ্কারের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ভূতুড়ে অবস্থায় পড়ে আছে। যার কারণে প্রতিষ্ঠান গুলো এখন যে যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করছেন। কেউ মালপত্র ও গরু-ছাগল রাখার ঘর হিসাবে ব্যবহার করছেন। আবার কিছু অসাধু লোকজন সেখানে প্রকাশ্যে অসামাজিক কাজ করছেন।

আবুল হোসেন নামের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিগত সময় প্রতিষ্ঠানে চালু বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর ব্যবহার না থাকায় বেশীর ভাগ এখন অকেজো হয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ কম্পিউটার-ল্যাপটপ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানে থাকা শিক্ষা উপকরণ রাখা লাইব্রেরী ও ল্যাব রুম রয়েছে। রক্ষণা-বেক্ষণ না থাকায় কাঠের তৈরি অনেক ব্রেঞ্চ বর্তমানের জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

আব্দুস সামাদ নামের অপর একজন শিক্ষক বলেন, নিয়ম অনুসারে একজন করে সহকারী শিক্ষক নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসার কথা। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো প্রকার তদারকি না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কেউ থাকেন না। আবার ক্লাস বন্ধ থাকায় সকল রুম তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। যার কারণে রুমের মধ্যে থাকা শিক্ষা উপকরণ গুলোর কোনো তদারকি করা হচ্ছে না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পালোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, বিধি মোতাবেক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহকারী শিক্ষকগণ নিয়মিত স্কুলে অবস্থান করবেন। সেই সাথে শিক্ষাথীদের অনলাইন ক্লাস গুলো যথাযথ রুম থেকে করাবেন। আবার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইমেন্ট সরবরাহ ও জমা প্রতিষ্ঠান থেকে করবেন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান গাফলতি করেন তবে তাকে কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। উ

পজেলা প্রাথিমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কাঠালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, লকডাউনের সময় শিক্ষকদের স্কুলে যেতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যে গুলোর বাউন্ডারি ওয়াল নেই। সে প্রতিষ্ঠান কিছুটা অরক্ষিত। সেখানে গরু-ছাগল চড়বে এবং বথাটে লোকজন অবস্থান করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিটি শিক্ষকদের নৈতিক দ্বায়িত্ব তাদের ওই প্রতিষ্ঠানে সব সময় রক্ষণা-বেক্ষণ ও তদারকি করা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম সানোয়ার হোসেন বলেন, এখনো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরোপরি নিরাপত্তা বলয় তৈরির কাজ বাকি আছে। ওই প্রতিষ্ঠান গুলোতে কিছু অনিয়ম হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পাই। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা আকতার জাহান বলেন, প্রতিষ্ঠান সুরক্ষার জন্যই শিক্ষকদের বলা হয়েছে শ্রেণি কক্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠদান করাতে। আবার এসাইনমেন্ট কার্যক্রম প্রতিষ্ঠান থেকেই করতে বলা হয়েছে। আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দেখভালে শিক্ষকদের সাথে গার্ডও রয়েছে। সেখানে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

 

  • 143
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে