করোনা : রাজশাহী সামাজিক সংক্রমণ!

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২১; সময়: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ |
করোনা : রাজশাহী সামাজিক সংক্রমণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি মাসে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর তালিকায় নাম থাকতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের। কিন্তু গত তিনদিনে তালিকার ধরন পাল্টেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জায়গায় এখন লেখা হচ্ছে রাজশাহীর নাম। গত চারদিনে ( ৬ জুন থেকে ৯ জুন পর্যন্ত) জেলা সিভিল সার্জনের তথ্য মতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত বছর মার্চ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী জেলায়।

রাজশাহীর করেনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাজশাহীর জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা জানাচ্ছেন, শুধু মৃত্যুই নয়- আক্রান্তের হারও যথেষ্ট ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন, আরটিপিসিআর, জেনএক্সপার্ট মিলে (৯ জুন) আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ। কিন্তু আরটিপিসিআর হিসেবে আক্রান্তের হার ৪০ শতাংশ ও জেনএক্সপার্ট ৫৭ শতাংশ। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দেখলে এ চিত্র ভয়াবহ।

রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, ৮ জুন সকাল ৮টা থেকে ৯ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩৫৩ জন। এরমধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৩শো জন। অর্থাৎ জেলায় মোট সংক্রমণের ৭৭ শতাংশই নগরীর বাসিন্দা।
সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে, ৯ জুন সকাল ১০ টা থেকে নগরীর ১৩টি কেন্দ্রে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়। এতে ৯৭৭ জনে ১২৬ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। আক্রান্তের হার ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হওয়ার স্পট সাহেববাজার।

নাম না প্রকাশে স্বাস্থ্যবিদরা জানাচ্ছেন, অনেক সময় অ্যান্টিজেন টেস্টে নেগেটিভ হলেও আরটিপিসিআরে পজিটিভ আসে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে হিসেবে করলে, প্রকৃত চিত্র আরও বেশি। যেসব এলাকায় ভিড় বেশি, সে এলাকাতে সংক্রমণের হারও বেশি। এবং এ চিত্র প্রমাণ করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সামাজিক সংক্রমণ চলছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের হিসেবে, ৯ জুন উপজেলা পর্যায়ে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ২৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে পজিটিভ হয়েছেন ৪২ জন। আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার পুঠিয়া উপজেলায়।

যখন করোনার পরিসংখ্যান উদ্বেগ ছড়াচ্ছে, তখনও নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার খুব একটা গরজ নেই বেশিরভাগ মানুষের। সড়ক, শপিংমল কিংবা খাবার হোটেল- স্বাস্থ্যবিধি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। সঙ্গে মাস্ক রাখার প্রবণতা বাড়লেও নাক-মুখ ঢাকার চেয়ে তা থুতনি বা কানে ঝুলিয়ে রাখার চিত্রই বেশি। একই চিত্র উপজেলা পর্যায়ে আরো বেশি। বিশেষ করে আম বাজারগুলোতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। কাছাকাছি অবস্থানে গাঁ ঘেষাঘেষি করে হাঁকডাকের মধ্যে চলছে আম কেনাবেচা। এই সপ্তাহে নগরীসহ পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র আমের হাটে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র।

শুধু রাজশাহী নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একত্রিত হলেও সেখানে অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, সাধারণ লকডাউন এর বিধিনিষেধ ও স্থানীয় প্রশাসনের যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে সেগুলো মানাতে পুলিশ মাঠে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি আর বিধিনিষেধ মানাতে তারা সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। রাজশাহী সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদার জানান, প্রকোপ দেখে মনে হচ্ছে সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে। যেহেতু সীমান্ত এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ৮০ ভাগ উপস্থিতি পেয়েছে, সে হিসেবে ধারণা করা যায়, রাজশাহীতেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি রয়েছে। এসব সংক্রমিতদের আলাদা করতে বা আইসোলেশনে রাখতে বাড়ানো হয়েছে পরীক্ষা।

সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী করোনা প্রতিরোধ কমিটি ব্যবস্থা নিবে। একই সাথে সদর হাসপাতাল সংস্কার কাজ শুরু করতে তৎপরতা শুরু হচ্ছে। আবার বিকল্প হিসেবে খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতাল এর কথাও ভাবা হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রমতে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৯২ জন। যার মধ্যে ৫৬ জন করোনা শনাক্ত। গত ৯ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৬০ জন। এরমধ্যে নগরীতে আক্রান্ত ১৩৭৪ জন।

  • 229
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে