কাজে আসছে না রাজশাহীর রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২১; সময়: ৩:৫২ অপরাহ্ণ |
কাজে আসছে না রাজশাহীর রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস ঠেকানোর রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ কোনই কাজে আসছে না বলে মনে করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে এখন সংক্রমণ অনেক হাই। বলা হয়েছিল- এখানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার চেষ্টা করোনা হবে; যেন রোগি কমে আসে। কিন্তু দেখা গেল যে, এক সপ্তাহে এর কোন ফল আসছে না। প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতালেও বাড়ছে রোগির সংখ্যা। যা মনে হচ্ছে, এখন আসলে এই পদ্ধতিতে সংক্রমণ কমানো সম্ভাব হবে না।

শামীম ইয়াজদানী বলেন, সংক্রমণ যদি প্রতিরোধ করা না যায়; তবে এতো রোগির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এক সময় সম্ভাব হবে না। এ জন্য আমার মনে হচ্ছে; এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয়ভাবে লকডাউন দেয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, যখন হাসপাতালে অর্ধেকের বেশী রোগি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা শুরু করে তখন সেখানে লকডাউন দেয়ার জন্য পরামর্শ হয়। সেখানে দুই সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছিল। এখন সেখানে সংক্রমণ কমে এসেছে। সেখানে সংক্রমণের হার উঠে গিয়েছিল ৬২ শতাংশের উপরে। এখন সেখানে নেমে এসেছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে। বুধবার এ জেলায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

গত ৩ জুন থেকে রাজশাহীতে চলছে রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ। প্রথমে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত করো হলেও গত সোমবার থেকে সেটি দুই ঘন্টা বাড়িয়ে বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর নয়জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস।

তিনি জানান, মৃত ১২ জনের মধ্যে সাতজন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান। বাকিরা মারা যান নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আর করোন শনাক্ত সাতজনের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন।

ডা. সাইফুল জানান, গত নয়দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ১০ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৯২ জন। এর মধ্যে ৫৬ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এর মধ্যে ১ জুন, সাতজন, ২ জুন সাতজন, ৩ জুন নয়জন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫ জুন ৮ জন, ৬ জুন ছয়জন, ৭ জুন ১১ জন, ৮ জুন আটজন, ৯ জুন আটজন এবং সর্বশেষ ১০ জন ১২ জন মারা যান।

উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৬, নওগাঁ ৭, নাটোর ১। একই সময় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৫ জন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডের ২৭১ শয্যার বিপরিতে রোগি ভর্তি রয়েছেন ২৯০ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৪২, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১১, নওগাঁর ১৫, নাটোরের ১৫, পাবনার ৩, কুষ্টিয়ার ৩ জন ও চুয়াডাঙ্গার ১ জন। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৮ জন।

অপরদিকে, করোনাভাইরাসের ‘নতুন হটস্পট’ রাজশাহীতে একদিনের ব্যবধানে ফের বেড়েছে সংক্রমণের হার। বুধবার দুইটি ল্যাবে রাজশাহীর ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৬৯ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দুইটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

এতে দেখা যায়, আগের দিনের চেয়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যা আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৪০ দশমিক ৬২ শতাংশ।

এছাড়াও এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল গত বৃহস্পতিবার ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ, শুক্রবার ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, শনিবার ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ, রোববার ৪১ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং সোমবার ছিল ৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, বুধবার রাজশাহীর দুই ল্যাবে ৬৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬৯ জনের পজিটিভ আসে।

এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫১ নমুনা পরীক্ষা করে ৬৩ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। এ জেলায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

  • 518
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে