রাজশাহীতে অনলাইনে আসক্ত শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২১; সময়: ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে অনলাইনে আসক্ত শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং ও প্রাইভেট বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছে। ফলে বেছে নিয়েছে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসগুলো। বর্তমানে ইন্টারনেটে ব্যবহারে মোবাইল ফোন অনেকের কাছে উপযোগী। সময় পার করতে, মন ভালো করার জন্য ডিজিটাল অনলাইনের ওপর নির্ভরশীলতা হয়ে পড়ছে অনেকেই। এমন চিত্র দেখা মিলবে হরহামেশায়।

লক্ষ্য করা গেছে- বেশ কয়েকজন তরুণ মিলে এক সঙ্গে মোবাইলে গেম খেলতে দেখা যায়। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে নগরীর চায়ের দোকান, খোলা ও ফাঁকা জায়গায় ছাড়াও খেলার মাঠে। তরুণদের গল্প আড্ডার বেশি অংশ ইন্টারনেট গেম। যে গেম মোবাইলের মাধ্যমে খেলা সম্ভব।

তরুণরা বলছেন- শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন বেশি কাজে লাগে না। একটু পড়া-শোনা, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে কথা বলা। এই সময় টুকুর পরে তারা কিন্তু নেমে পড়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর উপরে। বিভিন্ন অ্যাপস চালানোর পাশাপাশি গেম খেলে কারা। গেমগুলো বন্ধুদের সাথে যৌথভাবে খেলা সম্ভব। খেলা চলাকালীন নিজের মধ্যে আলাপচারিতাও হয় তাদের।

রাজশাহী কোর্ট কলেজের শিক্ষার্থী জয়া (ছদ্মনাম) জানান, ‘আমার মোবাইল ছিলো না। আব্বুর মোবাইল থেকে কয়েকদিন অনলাইনে ক্লাস করেছি। আব্বু সব সময় বাড়িতে থাকে না, তাই সমস্যা হতো। পরে আব্বু মোবাইল কিনে দিয়েছে। এখন কলেজ, কোচিং ও প্রাইভেটের ক্লাস অনলাইনে করি। করোনার ঝুঁকি নিয়ে বাসার বাইরে যেতে হয় না।’

শাহ মখদুম কলেজের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম জানান, ‘করোনার মধ্যে অনলাইনে ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা মোবাইল হাতে পেয়েছে। যা ‘বানরের হাতে খনতি’ বলা চলে। মোবাইল পেয়ে অল্প কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করে। বেশির ভাগ অনলাইনে থাকে, টিকটক করে। গেম খেলে।

তিনি আরও বলেন- অনলাইনে ক্লাস চলাকালে ৩শো শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৫০ জন ক্লাসে যুক্ত থাকে। কোনো পড়া ধরলে আর সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়না। তার মানে হাজিরার জন্য ক্লাসে যুক্ত থাকে তারা। এই মোবাইলের কারণে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে- যার উদাহারণ কিশোর গ্যাং। এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।’

জানা গেছে- স্মার্ট ফোন পাওয়ার পর ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে ফ্রি ফায়ারসহ নানা গেমে। এটা শুধু শহররে নয়, গ্রামরে শিক্ষার্থীরাও এখন এই খেলায় মেতে উঠেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে বিধি নিষেধ না থাকায় আটকানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের।

বর্তমানে ফ্রি- ফায়ার নামের অনলাইন ভিত্তিক গেম তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। সঙ্গে পাবজি, কল অফ ডিউটি নামক গেমও বেশ প্রচলিত। এতে শুধু লেখাপড়ার না মানসিক, শারীরিক ক্ষতির দিকে এগুচ্ছে তারা। এইসব গেম ইন্টারনেট ব্রাউজিঙের জলন্ত পরিণতি গত ১৩ এপ্রিল জেলার দুর্গাপুরে এক স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এমন অবস্থা দেশের বিভিন্ন জাগায় অহরহ ঘটে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে উঠে আসে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৪ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। অনলাইনে সংযুক্ত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধু এবং সহপাঠীদের একসঙ্গে মিলিত হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের মিটিং, ক্লাস, ফোনালাপ, পরীক্ষা অনলাইনে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনলাইনের উপর ভিত্তি করে যেসকল কাজগুলো করা সম্ভব সেগুলো হচ্ছে।

অন্যদিকে দেখা গেছে, যেসব শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ফোন নেই তাদের সময় পার হচ্ছে গল্পের বই, টেলিভিশন, কার্টুন দেখে। অনেকেই বাসায় হাতের কাজ করছে, কাগজের বিভিন্ন ধরনের কারুকাজের জিনিস বানাছে।

এ ধরনের কাজ বাসায় বসে করলেও, যে শিক্ষার্থীদের নিজের মোবাইল ফোন নেই তারা অন্যের ফোন নিচ্ছে বা বাসায় বাবা- বড় ভাই, বন্ধুদের ফোনে ইন্টারনেট বা গেম খেলছে।

এ সকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বন্ধু-বান্ধবের নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে। নিজের ফোন না থাকায় বায়না ধরছে মোবাইল কিনে দেয়ার জন্যে। সন্তানদের আবদার, বর্তমানে সবার তো নিজস্ব মোবাইল আছে। এসময় ঘরে বসে সময় পার করতে আমাকেও ফোন কিনে দিতে হবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘ড্রাগের থেকেও ইন্টারনেট আসক্ত খারাপ। বর্তমানে ইন্টারনেট চরম ক্ষতি দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট, খেলাধুলা বন্ধ- শিক্ষার্থীরা অলস সময় কাটাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে সময় কাটাতে বই, পত্র-পত্রিকা না পড়ে আনলাইন প্রতি আসক্ত বেশি হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে তেমন সুযোগ মিলতোনা ইন্টারনেট চালানোর। এখন এটার সুযোগ বেশি কাজে লাগাছে তারা। অপরাধমূলক কাজ বেশি হচ্ছে।

অভিভাবক সালমা ইসলাম জানান, প্রায় সব বয়সের মানুষ ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তবে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেশি। তারা অনলাইনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ইন্টারনেটে থাকে। ফেসবুক ও ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসসহ বিভিন্ন ধরনের গেম খেলছে।

নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘করোনাকালীন অনলাইনে আসক্তি বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গেম খেলছে। বিষয়গুলো আমরা নজর রাখছি। এছাড়া করোনা কমলে স্থানীয় প্রতিনিধি ও সমাজসেবকদের নিয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করতো। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলা থাকবে। এতে করে গেমের নেশা কমে যাবে।

  • 155
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে