টিনের চালায় শুরু হওয়া গ্রন্থাগার পেল পাঁচতলা ভবন
শফিকুল ইসলাম : বিকেল চারটা বাজতেই সাইকেল আর জুতায় ভরে যায় ভবনের সামনের নিচতলার অংশটি। ভবনের ভেতরে সুনসান নীরবতা। কারও হাতে বই, কারও হাতে পত্রিকা, কেউবা লিখছেন। সবাই পাঠক। বিকেল হলেই তাঁরা আসেন এই ভবনে। বই পড়েন রাত নয়টা পর্যন্ত।
পাঁচতলা এই ভবন একটি গ্রন্থাগার। রাজশাহী নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশেই এটির অবস্থান। কাছেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৭ সালে এই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘পদ্মা সাধারণ গ্রন্থাগার’ নামে। প্রতিষ্ঠা করেন সেই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া উদ্যমী কিছু শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠাকালে এই গ্রন্থাগারটি ছিল টিনের চালার। সেই গ্রন্থাগার এখন পাঁচতলা ভবনে পরিণত হয়েছে। এটিই এখন ভবনের দিক দিয়ে রাজশাহী নগরের সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগার।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থী তালাইমারীতে গ্রন্থাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সে সময় এই কাজে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা এগিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা এলাকায় চাঁদা তুলে পর্যায়ক্রমে গ্রন্থাগারের জন্য জমি কেনেন, জমির ওপর ইটের গাঁথুনি দিয়ে টিনের চালার একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন।
গ্রন্থাগারের প্রথম সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তালাইমারীর এই এলাকায় ক্যাম্প তৈরি করে। এলাকাবাসী যুদ্ধের সময় সেখান থেকে চলে যান। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ওই ক্যাম্প এলাকা ঘিরে কিছু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়। এরই একপর্যায়ে তাঁরা ওই এলাকায় গ্রন্থাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এলাকায় চাঁদা তুলে, শিক্ষার্থীদের জমানো টাকা দিয়ে একসময় গ্রন্থাগারের জমিটা কেনা হয়।
মোস্তাকিম আরও বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী আবু সাইদ, শাহ মখদুম কলেজের শিক্ষার্থী এমদাদুল হকসহ বেশ কয়েকজন গ্রন্থাগার নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। পরামর্শ দেন তৎকালীন রাজশাহীর ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন।
১৯৯২ সালে প্রথম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান আসে গ্রন্থাগারে। সেই অনুদানের টাকায় গ্রন্থাগারের পাশেই একটি অফিস কাম সম্মেলন কক্ষ করা হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ২০০ কোটি টাকার অনুদান পায় ভারত থেকে। ৮টি সিটি করপোরেশনকে ২৫ কোটি করে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলা হয় ওই চুক্তিতে। এ খবর পেয়ে গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সন্দীপ মিত্রের সঙ্গে কথা বলেন।
সন্দীপ মিত্রের পরামর্শে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে সাড়ে ৪ কোটি টাকার তহবিল চেয়ে পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়। বরাদ্দ হয় তিন কোটির বেশি টাকা। এই টাকায় প্রায় ছয় কাঠা জমির ওপর পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সূত্র- প্রথম আলো
404