বাগমারায় নির্মম নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী, মামলা নেয়নি পুলিশ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২১; সময়: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় নির্মম নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী, মামলা নেয়নি পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন টিপু সুলতান নামের এক পান ব্যবসায়ী। নির্যাতন ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় এজাহার দিলেও পুলিশ তা রের্কড করেনি। পূঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন তিনি। নিজ বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে পুলিশ বলেছে, নির্যাতনের ঘটনা সঠিক হলেও ছিনতাইয়ের অভিযোগ সত্য কীনা তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

সোমবার সকালে উপজেলার মচমইল গ্রামের নিজ বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে টিপু সুলতান অভিযোগ করেন, গত ৭ এপ্রিল উপজেলার জনতা ব্যাংকের মোহনগঞ্জ শাখা থেকে সাত লাখ টাকা তুলে মচমইল হাটে আসছিলেন। তিনি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মচমইল বেলতলা মোড়ে পৌঁছালে প্রতিপক্ষ সুমন ও পলাশ নামের দুই যুবক তাঁকে ঘিরে ধরেন। এসময় তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দেন। এসময় তাঁরা ব্যবসায়ী টিপু সুলতানকে হাতুড়ি, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। তাঁকে আধমরা অবস্থায় মাটিতে ফেলে দেয়। এসময় তাঁর কাছে থাকা পান কেনার সাত লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়েন। ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এই ঘটনার পর তিনি থানায় আট জনের বিরুদ্ধে একটি এজাহার দেন। তবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ তা রের্কড করেনি।

সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন টিপু সুলতান (২৮)। তিনি বলেন, দুবৃর্ত্তরা তাঁকে শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাব পঙ্গু করেছে। পূর্ব শক্রতার জের ধরে তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি এখন বাড়িতে ফিরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওইদিন মাটিতে ফেলে বেধড়ক পিটুনি দেওয়ার পর প্লাস দিয়ে বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুলে চাপ দিয়ে সামনের অংশে কেটে ফেলে। পায়ের বিভিন্ন স্থানে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাদের হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা পাওয়া যায়নি বলে জানান। সাংবাদিকদের এসময় তিনি ক্ষত ও আঘাতের দাগ দেখান। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুবৃর্ত্তরা তাঁর ব্যবসার পূঁজি নেওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও পঙ্গু করে দিয়েছেন। তিনি ওইদিন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা সাত লাখ টাকার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সাংবাদিকদের দেখান।

তিনি অভিযোগ করেন, থানায় এজাহার দেওয়া হলেও পুলিশ তা এখনো তালিকাভুক্ত করেননি। আসামিরা সবাই প্রভাবশালী একজন নেতার কাছের লোক হিসাবে পরিচিত। তাঁকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ব্যবসায়ী টিপুর ওপর হামলাকারীরা এলাকায় উঠতি বখাটে হিসাবে পরিচয়। তাঁদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লোকজন অতিষ্ঠ হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। টিপুর ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে তা অমানবিক বলে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিবেশিরা মন্তব্য করেন।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি পলাশ ও সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোন না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁদের পক্ষের (স্বজনেরা) বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে শক্রুতা চলে আসছিল। এর জের ধরে ওইদিন হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাক আহম্মেদ ব্যবসায়ী টিপু সুলতানের লিখিত এজাহার পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে তদন্ত চলছে। একজন পরিদর্শককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পেলে মামলা তালিকাভূক্ত করা হবে।

  • 21
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে