রাতের আঁধারে চলছে মাটি লুটপাট, নির্বিকার রাবি প্রশাসন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২১; সময়: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ |
রাতের আঁধারে চলছে মাটি লুটপাট, নির্বিকার রাবি প্রশাসন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, রাবি: রাতে অন্ধকারে চলছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের পুকুর খননের মাটি লুটপাট। নিয়ম উপেক্ষা করে প্রভাবশালীরা ট্রাকে ভরে ক্যাম্পাসের মাটি ইটের ভাটায় বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে। দেখভালের দায়িত্বরত কৃষি প্রকল্প বিভাগ প্রভাশালীদের দাপটে অসহায়। কিন্তু এর প্রতিকারে এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, খোদ প্রশাসনের অনুমতিতেই চলছে এই কর্মকাণ্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের টেন্ডার হয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা সর্বোচ্চ দরে এই টেন্ডার পান। কিছুদিন আগে সেখানে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী খননের পর পুকুরের পাড় বাঁধাই করে অতিরিক্ত মাটি পাশেই রাখার কথা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে নিয়ম উপেক্ষা করে এই মাটি ট্রাকে ভরে বাহিরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের চোদ্দপাই থেকে বধ্যভূমি এলাকায় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ৫০ টির বেশি ট্রাক। এই মাটি কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারা নিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি ট্রাক চালকরা। তবে মাটি নিয়ে যাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি রয়েছে এমন তথ্য জানান একাধিক ড্রাইভার। আর এই মাটিগুলো বিভিন্ন ইট ভাটায় ট্রাক প্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পুকুর খননের মাটি ট্রাক্টরে ভরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নেয়ার সত্যতা পেয়েছে কৃষি প্রকল্প বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি ক্যাম্পাসের বাইরে না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ সেই নির্দেশনা অমান্য করে গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসের এসব মাটি বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় ইজারাদারদের কাছে নিরুপায় হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বরতরা।

এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটি ইতিমধ্যে একাধিক মিটিং করেছেন। কিভাবে এই মাটি লুট বন্ধ করা যায়, সে বিষয়ে নানা পদক্ষেপের কথাও চিন্তা করেছেন। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার চিন্তাভাবনা করছিল তারা। তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সম্মতি না থাকায় থানায় অভিযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে কৃষি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি প্রকল্প বিভাগের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাটি লুট বন্ধ করতে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু ঊর্ধ্বতন অদৃশ্য শক্তির কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

কৃষি প্রকল্প উপদেষ্টা কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, তারা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া তাদেরকে মাটি বাইরে নেয়ার জন্য মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। সেই অনুমতির ভিত্তিতেই তারা ক্যাম্পাস থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছে।
এই অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কৃষি প্রকল্প আমার অধীনে না। যারা আমার বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে, তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওখানে কাউকে আমার কোনো মৌখিক অনুমতি দেয়া নেই।

  • 36
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে