এবার পুলিশের টার্গেট লাশ বহনকারী গাড়ির দালাল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১; সময়: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ |
এবার পুলিশের টার্গেট লাশ বহনকারী গাড়ির দালাল

তারেক মাহমুদ : ছদ্মনাম রবিউল ইসলাম। বাড়ি নওগাঁর আত্রাই থানা। রামেক হাসপাতালে তার বাবা অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গ্রামের বাসায় বাবার লাশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। হাসপাতালের বাইরে কথা বলেন লাশ বহনকারী গাড়ির লোকজনদের সাথে। গাড়ির ভাড়া শুনেই তিনি রীতিমত হতবাক হন। স্বাভাবিকের চেয়ে চার পাঁচ গুন বেশি ভাড়া।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয় হাসপাতালে মারা যাওয়া মানুষের স্বজনদের। এ নিয়ে সমস্যা লেগেই থাকে। জানুয়ারি মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশবহনকারী গাড়ির কর্মরতদের সাথে মতবিনিময় করতে হাসপাতালে আহ্বান করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশবহনকারী গাড়ির প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব রেখেছিলেন। তবে লাশবহনকারীরা সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ বহনকারী সব গাড়ি বাইরে রাখতে বলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠে লাশ বহনকারী গাড়ির সিন্ডিকেট। তারাও বাইরের অন্য কোনো গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে ডুকতে দিচ্ছে না। এনিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে হাসপাতালে মৃত মানুষের স্বজনদের। বাধ্য হয়েই তাদের বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে লাশ নিতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন লাশ বহনকারী গাড়ি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।

উল্লেখ্য, রোববার (২১ ফেব্রয়ারি) বিকেল তিনটায় নগরীর লক্ষীপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিডিএম হসপিটালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি মারা যায়। মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালের সকল বিল পরিশোধ করে লাশটি নিজ বাড়ি মেহেরপুর জেলায় নেয়ার জন্য নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় লাশ বহনকারী গাড়ি আটকে দেয় স্থানীয় চাঁদাবাজ ও দালাল চক্রের সদস্যরা।

দালালচক্রের সদস্যরা জানান, এখান থেকে কোনো লাশ নিজ এলাকায় নিতে হলে আমাদের রাজশাহীর অ্যাম্বুলেন্স যোগেই নিতে হবে। নইলে নিজেস্ব অ্যাম্বুলেন্সে নিতে চাইলে স্থানীয় লাশ বহনকারী মাইক্রো সমিতিকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। লাশের আত্মীয়-স্বজন মহানগর গোয়েন্দা শাখায় সংবাদ দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানি জানান, লাশ বহনকারী সব গাড়ির নির্ধারিত ভাড়া ঠিক করাসহ গাড়িতে স্টিকার লাগানোর জন্য তাদের ডেকেছিলাম। কিন্তু তারা আসেনি! আমরা হাসপাতালের ভেতরের গাড়িগুলো বাইরে বের করে দিয়েছি। ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়ে আমার কাছেও অনেক অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি সমাধান করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সিটি মেয়রকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে। খুব দ্রুত এই বিষয়টি সমাধান করা হবে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমরা হাসপাতালের বাইরে লাশ বহনকারী গাড়ির দালাল ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের একটি সিন্ডিকেটকে ধরা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা টিম সবসময় খোঁজ খবর রাখছে। হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখতে দালাল ও লাশ বহনকারী গাড়ির সিন্ডিকেট বেশি ভাড়া আদায় করলে বা চাঁদাবাজি করলে- কোনো অভিযোগ পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

  • 152
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে