রাজশাহীতে হত্যা মামলা পরিবর্তন করায় ওসি বিরুদ্ধে দুদকে মামলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২১; সময়: ২:০১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে হত্যা মামলা পরিবর্তন করায় ওসি বিরুদ্ধে দুদকে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : হত্যা মামলার পরিবর্তেনের অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়ার থানার সাবেক ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীীত দমন কমিশন (দুদক)। রোববার দুদকের রাজশাহী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আল আমিন বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ১, তারিখ- ২৪/০১/২০২১।

আল আমিন বলেন, দুদকের তদন্তে পুঠিয়ার নূরুল ইসলাম হত্যার এজাহারে আসামীর নাম ও বিবরণে পরিবর্তেনের প্রমান মেলেছে। এর পর ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়। ওসি সাকিল কারসাজি করে এজাহারে আটজনের বিরুদ্ধে ছয়জনকে আসামী এবং বর্ণনার পরিবর্তন আনেন।

এজাহার বিবরণ

দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাজশাহীর ই/আর নং ৪৫/২০১৯ এর অভিযোগ অনুসন্ধান সংক্রান্তে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জনৈক নূরুল ইসলাম রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার সড়ক ও পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ২৪/০৪/২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত উক্ত শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন এবং সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত হন।

কিন্তু উক্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফলাফল পরিবর্তন করে আব্দুর রহমান পটলকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ অপর তিনজন বাদী হয়ে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া সহকারী জজ, ১ম আদালতে ০৮ জনকে বিবাদী করে একটি নির্বাচনি মোকাদ্দমা নং ১৪/২০১৯ দায়ের করেন।

উক্ত মোকদ্দমাটি শুনানীঅন্তে সংশ্লিষ্ট আদালত বিবাদীগণের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানা সড়ক ও পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নবনির্বাচিত কমিটির সমস্ত কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শানোর আদেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক উক্ত অন্তবর্তী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচারিত হলে উক্ত মামলার বিবাদী মোঃ আব্দুর রহমান পটল এবং তার সহযোগীরা নুরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে জীবন নাশের হুমকি প্রদান করেন।

গত ১০/০৬/২০১৯ তারিখ সন্ধ্যা হতে নুরুল ইসলামের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন ১১/০৬/২০১৯ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০ ঘটিকার সময় নুরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন যে, নুরুল ইসলামের মরদেহ পুঠিয়া এ.এস.এস. ইট ভাটার মধ্য পড়ে আছে। মৃত নূরুল ইসলামের কন্যা নিগার সুলতানা ঐ দিন দুপুর আড়াইটার দিকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য পুঠিয়া থানায় যান এবং তার ভাষ্যমতে তার পিতার হত্যার সাথে জড়িত ৮ জন আসামী করে এজাহার দায়ের করেন।

আসামীরা হলেন, ১) মোঃ আঃ রহমান পটল (৫৫), পিতা- মৃত আশ্রাফ আলী, সাং- ঝলমলিয়া; ২) মোঃ আহসানুল হক মাসুদ ওরফে নেতা মাসুদ (৪৮), পিতা-মৃত সিরাজ, সাং-ঝলমলিয়া; ৩) মোঃ মিঠু ওরফে গুন্ডা মিঠু, (২৮), পিতা- হাসান, সাং- কানাইপাড়া; ৪) মোঃ গোলাম ফারুক (৫৫), পিতা- ডাঃ কছিমুদ্দিন, সাং- রামজীবনপুর; ৫) মোঃ কে এম শাহীন (৬০), পিতা- মৃত দুলাল, সাং- ঝলমলিয়া; ৬) মোঃ নুরুল আমিন (৫৫), পিতা- মৃত কাচু মন্ডল, সাং- সেনভাগ; ৭) মোঃ মতিন (২৫), পিতা- মোঃ শাহাদৎ হোসেন, সাং- রামজীবনপুর, সর্ব থানা- পুঠিয়া, ও ৮) মোঃ আঃ রশিদ (৪৮), পিতা- মৃত আঃ গফুর, সাং- ভাংড়া, থানা- বেলপুকুর।

কিন্তু উক্ত এজাহারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ থাকায় ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ডভূক্ত না করে সংবাদদাতা জনাব নিগার সুলতানাকে তা সংশোধনপূর্বক উক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় এজাহার দিতে বলেন। তৎপ্রেক্ষিতে জনাব নিগার সুলতানা উক্ত বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করলে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ তা গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে জনাব নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন।

পরবর্তীতে সংবাদদাতা জনাব নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা হতে এজাহার ও প্রাথমিক তথ্য বিবরণী এর কপি পুঠিয়া থানার মামলা নং ০৮ তারিখ: ১১/০৬/২০১৯ সংগ্রহ করেন দেখেন যে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামীর নাম ও বাসস্থান/ঠিকানা সম্বলিত কলামে কোন আসামীর নাম না লিখে সেখানে ‘অজ্ঞাতনামা’ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এজাহারের বর্ণনা পরিবর্তনের পাশাপাশি আসামীর সংখ্যা ০৮ (আট) জনের পরিবর্তে ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এরা হলেন, ১। মোঃ আঃ রহমান পটল (৫৫), পিতা- মৃত আশ্রাফ আলী, সাং- ঝলমলিয়া; ২। মোঃ একেএম শাহীন (৫৫), পিতা- মৃত দুলাল, সাং- ঝলমলিয়া; ৩। মোঃ নুরুল আমিন (৫৫), পিতা- মৃত কাচু মন্ডল, সাং- সেনবাগ; ৪। মোঃ মিঠু @ গুন্ডা মিঠু (২৮), পিতা- হাসান, সাং- কানাইপাড়া; ৫। মোঃ আঃ মতিন (২৫), পিতা- মোঃ শাহাদত, সাং- ঝলমলিয়া, সর্ব থানা- পুঠিয়া; ৬। মোঃ রশিদ (৪৮), পিতা- মোঃ আঃ গফুর, সাং- ভাংড়া, থানা- বেলপুকুর।

অর্থাৎ সংবাদদাতা নিগার সুলতানা তার দাখিলকৃত এজাহারে সুনির্দিষ্টভাবে আট জন আসামীর নাম উল্লেখপূর্বক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুঠিয়া থানা বরাবর এজাহার দাখিল করলেও ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ কারসাজি মূলকভাবে উক্ত এজাহার পরিবর্তন করে ছয় জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি উক্ত এজাহারে বর্ণনার পরিবর্তন করেন এবং বেআইনীভাবে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামীর নাম ও বাসস্থান/ঠিকানা সম্বলিত কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লিখে একটি বিতর্কিত মামলা রুজু করেন।

নিগার সুলতানা উক্ত বিতর্কিত এজাহার এর বিরোধীতা করে প্রতিকারের নির্দেশনা চেয়ে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন নং ৯৮৯৫/২০১৯ দায়ের করেন। উক্ত রীট পিটিশনের রুল নিশি ইস্যুর সময় বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, রাজশাহীকে জনাব নিগার সুলতানা কর্তৃক দায়েরকৃত পুঠিয়া থানা মামলা নং ০৮ তারিখ: ১১/০৬/২০১৯ এর এজাহার পরিবর্তন বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক একটি প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সে প্রেক্ষিতে মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার, বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, রাজশাহী কর্তৃক বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান শেষে জনাব নিগার সুলতানার দায়েরকৃত এজাহার গ্রহণ না করে কারসাজি মূলকভাবে এজাহার দায়েরের ক্ষেত্রে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ এর সন্দেহজনক ভূমিকা রয়েছে মর্মে সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

  • 3
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে