পুঠিয়ায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজে মেয়রের কমিশন ৩০ লাখ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২০; সময়: ১:৩২ অপরাহ্ণ |
পুঠিয়ায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজে মেয়রের কমিশন ৩০ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঠিকাদার বিল বাবদ যেদিন পৌরসভার হিসাব নম্বর থেকে ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলেছেন, সেদিনই মেয়রের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এই তথ্য পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র রবিউল ইসলামের ব্যাংক হিসাবের। জমাদানকারী হিসেবে জমা স্লিপে পৌরসভার নিম্নমান সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর ‘আতিকুর’-এর স্বাক্ষর থাকলেও মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া আছে মেয়রের।

এ ব্যাপারে পৌরসভার নিম্নমান সহকারী আতিকুর রহমান বলেন, জীবনেও ৩০ লাখ টাকা একসঙ্গে চোখে দেখিনি। মেয়র দাবি করেন, এটা তার গরু-মহিষ বিক্রির টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

পুঠিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, পৌরসভার দুটি প্যাকেজের রাস্তা করার জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার টেন্ডার হয়। এই কাজের অগ্রিম বিল বাবদ এক কোটি টাকা পৌরসভার নিজস্ব হিসাব নম্বরে গত ১৬ এপ্রিল জমা হয়। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোলাপ কনস্ট্রাকশনকে ২০ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংক পুঠিয়া শাখার পৌরসভার হিসাব নম্বর থেকে চেকের মাধ্যমে ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়।

একই দিন অগ্রণী ব্যাংকের একই শাখায় মেয়র রবিউল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে ৩০ লাখ টাকা জমা করা হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল ঠিকাদার গোলাপকে দুটি চেকে সাড়ে সাত লাখ ও চার লাখ এবং ৩১ মে অন্য ব্যাংক বা শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে শেষ করা হয় নগর উন্নয়ন প্রকল্পের এক কোটি টাকা।

সমকালের কাছে এই পৌরসভা ও মেয়র রবিউলের আলাদা দুটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য এসেছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মেয়র রবিউল ইসলামকে যে কোনো টেন্ডারের কাজে ১০ শতাংশ কমিশন বাধ্যতামূলক দিলেই কেবল বিল পান ঠিকাদার। এ হিসেবে মেয়র ওই নগর উন্নয়ন প্রকল্পে মোট বরাদ্দের ওপর ইতোমধ্যে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন।

আরও জানা যায়, মেয়র রবিউল ইসলামের এসব টাকার অধিকাংশই লেনদেন করেন নিম্নমান সহকারী আতিকুর রহমান। মেয়র ওই ৩০ লাখ টাকাও কমিশন হিসেবে বুঝে নেওয়ার পর সেই টাকা তাকে দিয়ে নিজের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখেন। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত আতিকুর মেয়রের ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে ১৪ বারে মোট ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলেছেন। তবে ব্যাংক স্টেটমেন্টে জমাদানকারীর স্বাক্ষর না থাকায় আতিকুর কতবার টাকা জমা দিয়েছেন, সে তথ্য জানা যায়নি।

এ বিষয়ে আতিকুর রহমানকে কল করা হলে প্রথমে বলেন, মেয়রের মহিষ বিক্রির টাকা দেড় মাস আগে জমা দিয়েছেন। তবে ৩০ লাখ টাকা তিনি জমা দেননি। তার স্বাক্ষরে জমা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কে স্বাক্ষর করেছে, তা তিনি জানেন না। দেড় মাস আগে মহিষ বিক্রির কত টাকা জমা হয়েছে, তাও তিনি বলতে পারেননি।

পরে আবারও মেয়রের ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায়, ২৫ অক্টোবর ২৪ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন মেয়র। সেদিন তার খামারের কর্মচারী, মেয়রের সহযোগী নওশাদ কসাইসহ মহিষ ক্রেতারা অগ্রণী ব্যাংক পুঠিয়া শাখায় গিয়ে ওই টাকা জমা দেন বলে ব্যাংক সংশ্নিষ্ট অনেকেই নিশ্চিত করেছেন।

জমা স্লিপে থাকা নম্বরটি মেয়র রবিউল ইসলামের বলে নিশ্চিত করেন আতিকুর। তার সঙ্গে কথা শেষ করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ব্যাংকের জমা স্লিপে থাকা নম্বর থেকে মেয়র রবিউল এই প্রতিবেদককে অনবরত কল করতে থাকেন।

তৃতীয়বারের ফোন কলটি রিসিভ করলে মেয়র দাবি করেন, তার ব্যাংক হিসাবে ৩০ লাখ টাকা টেন্ডারের কাজের কমিশন নয়। তিনি কোনো কমিশন নেন না। তিনি জানান, এটা ছিল গরু-মহিষ বিক্রির টাকা। পৌরসভার কর্মচারী আতিকুর রহমান কেন টাকা জমা করেছেন- এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, আমার সব লেনদেন আতিকই করে। পরক্ষণেই বলেন, এই ৩০ লাখ টাকা নিজেই জমা করেছি। তবে জমা স্লিপে আতিকুর নামে স্বাক্ষরটি কার, তা তিনি জানেন না।

কিছুক্ষণ পর আবারও মেয়র এই প্রতিবেদককে কল করে বলেন, ৩০ লাখ টাকা গরুর ক্রেতা নিজেই জমা করে দিয়েছেন। তিনি এবার বলেন, পৌরসভার কর্মচারী আতিকুর রহমান আমার ব্যাংকের লেনদেন করেন না।

মেয়রের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, তিনি গত দুই বছরে জমা দিয়েছেন এক কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩০ টাকা। তুলেছেন এক কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৯০১ টাকা। গত ৩ ডিসেম্বর তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নম্বরে ছিল চার হাজার ৫২৮ টাকা। তবে নির্বাচনী হলফনামায় তিনি নগদ টাকা দেখিয়েছেন ৩০ লাখ ৯২ হাজার ৪৪৮ টাকা।

এসব টাকার বিষয়ে মেয়র বলেন, ২৮ ডিসেম্বর আমার পৌরসভায় নির্বাচন। নির্বাচনে ইমেজ নষ্ট করতে ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে।

এ বিষয়ে মেসার্স গোলাপ কনস্ট্র্রাকশনের মালিক গোলাপ উদ্দীন আহমেদ বলেন, দুটি রাস্তার সাড়ে তিন কোটি টাকার কাজ করছি। এক কোটি টাকার মতো বিল পেয়েছি। মেয়রকে কোনো টাকা কমিশন হিসেবে দেইনি। মেয়রের ব্যাংক হিসাবে একই দিন ৩০ লাখ টাকা কোথা থেকে জমা হয়েছে, তা জানি না। সূত্র- সমকাল

  • 326
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে