বাগমারায় বিলের দখল নিয়ে আ.লীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২০; সময়: ২:৪৩ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় বিলের দখল নিয়ে আ.লীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও বিল দখলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই পক্ষই মুখামুখি অবস্থান করছেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও বিল দখলে নেয়ার জন্য ঝিকরা ইউপি’র চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হামিদ ফৌজদার এবং অন্য গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহসভাপতি ও রাজশাহী জজকোর্টোর এপিপি এ্যাড আফতাব উদ্দিন আবুল।

গত শনিবার (২৮ নভেম্বর ) সকাল থেকে থেকে ঝিকরার পাটাবিলায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ঝিকরা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, কোন কথাবার্তা ছাড়ায় চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ ফৌজদারের পক্ষের লোকজনেরা তার উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে তিনি আত্মরক্ষার জন্য একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় আওয়ামী লীগের দু-গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

বাগমারা থানার পুলিশ জানায়, উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের ঝিকরার মিরপাড়া, কুদাপাড়া, রায়নগর ও দূরগজা ব্রীজ এলাকার প্যাটাবিলায় ২০ থেকে ২২ বিঘা সরকারি খাস জমি রয়েছে। বিগত বছর গুলোতে দুই পক্ষের লোকজন মিলে সরকারি জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে। গত বছরের মাছ বিক্রির টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। চলতি বছরে পিপি আফতাব উদ্দীন আবুলের পক্ষের আব্দুল মান্নান, শ্যামল হোসেন ও আব্দুল হানিফ বিলটি লীজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করে।

সম্প্রতি বিলের পানি নেমে যাওয়ায় আবুল উকিল পক্ষের লোকজন মাছ ধরতে গেলে চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজনেরা বাধা দেয়, চেয়ারম্যানের ভাই দেলবর ফৌজদার (৪৭) ভাতিজা দুলাল হোসেন (২০), ভাতিজা ভুলু মিয়া (৩০), সাজ্জাদ হোসেন (৪৫) ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি রহিদুল ইসলামসহ প্রায় ২৫/৩০ জন । এসময় তারা মাছ ধরার দেশীয় বিভিন্ন উপকরণ ছাড়াও দেশীয় অস্ত্র কুচ ফালা ও লাঠিসোটা নিয়ে বিলে নেমে পড়ে। বর্তমানে দুই পক্ষ এখনো মুখামুখি অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

এ সময় চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজন যুবলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেনকে ধাওয়া করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন আত্মরক্ষার্থে দৌড় দিয়ে স্থানীয় একটি মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রতিপক্ষের লোকজন মসজিদটি ঘিরে ফেলে। খবর পেয়ে বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেনকে উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে । বিলটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ক্রমেই উত্তেজান ও সংঘাতময় পরিস্থিতি চরম আকার ধারন স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে।

স্থানীয় জনগন ও এলাকার দরিদ্র মৎসজীবিদের স্বার্থে বিলটি সরকারিভাবে উন্মক্ত রাখার দাবী জানান তারা। যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, তারা পরিকল্পিত ভাবে আমার উপর হামলা করেছে। এখন তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক প্রাং জানান, উভয় পক্ষ মিলে বিলে মাছ চাষ করবে এবং মিলে মিশে থাকবে। এ জন্য বিলটি লীজ নিতে আমরাও সহযোগিতা করেছিলাম।

এ্যাড, আফতাব উদ্দিন আবুল জানান, জোরপূর্বক দখল করে মাছ ধরার পায়তারা করছে। চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ ফৌজদার তার লোকজন দিয়ে এলাকার আইন শৃংখলা ও পরিবেশ নষ্ট করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ ফৌজদার বলেন, বিলটি উন্মুক্ত রাখার জন্য বিল এলাকার আশেপাশের লোকজন দীর্ঘদিন থেকে দাবী জানিয়ে আসছে। সেখানে আমার কোনজন জড়িত নয় বলে তিনি দাবী করেছেন । অপর দিকে উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। অল্প সময়ের মধ্যে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ জানান, বিল এলাকার পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। সেখানে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন নিম্পত্তির জন্য আজ বুধবার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

  • 61
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে