করোনায় কমেছে বধ্যভূমির দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২০; সময়: ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ |
করোনায় কমেছে বধ্যভূমির দর্শনার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে। আগে প্রতিদিন কয়েকশ দর্শনার্থী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে আসতেন। কিন্তু করোনার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। সোমবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি ঘুরে এমনটাই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কথা হয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য অনুভবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দায়িত্ব পালন করি। পাশাপাশি বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের দেখাশুনা করি। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দর্শনার্থী কম আসে। প্রতিদিন আনুমানিক ২০-৩০ জন আসেন ঘুরে দেখতে।’

সমতল থেকে বেশ খানিকটা জায়গা উঁচু করে বানানো হয়েছে বদ্ধভূমিটি। এর ভেতরে একটি বড় কূপকে ঘিরে বানানো হয়েছে কংক্রিটের গোলাকার বেদি। কূপের গভীর থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ৪২ ফুট উঁচু ইটের স্তম্ভ। এ স্তম্ভটি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের এক টুকরো ইতিহাস। পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসরদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি। নাম না জানা অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভটি।

অপূর্ব রায়, শাকিল কুমার রায়, মনোতোষ বর্মন, শুভ রায় ও নিরুপম পাঁচ বন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ ঘুরে সেলফি তুলছেন। বদ্ধভূমি সম্পর্কে তারা কিছু জানে কিনা জানতে চাওয়া হলে বলেন, নাম না জানা অসংখ্য শহীদের জন্য এই স্মতিস্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা এতদিন বিভিন্ন মাধ্যমে পড়েছি। কিন্তু দেখা হয়নি। তাই ঠাকুরগাঁও থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজশাহীতে এসেছি। সুযোগ পেয়ে বিকালে আমরা পাঁচজন মিলে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভটি ঘুরে দেখলাম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আরা ঝিলিক তার শ্বশুর আব্দুল খালেকসহ তার বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি জানালেন, বধ্যভূমি অসাধারণ একটা জায়গা। আমি ১ বছর ৩ মাস পর আসলাম। স্মতিময় জায়গা দেখে আগের মতোই ভালো লাগছে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে এসেছেন রেজওয়ানুর রহমান। বধ্যভূমি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে একটা গণকবর, এখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গাতে হত্যা হওয়া অপরিচিতি শহীদদের স্মরণে এই বধ্যভূমি তৈরি করা হয়। এই ইতিহাস আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু চোখ দিয়ে দেখার জন্য এখানে আসা।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সামিউল ইসলাম বলেন, ‘জীবনের প্রথমবার বধ্যভূমি দেখতে এসেছি। এসে আমার অনেক ভালো লেগেছে এবং অনেক তথ্য জনতে পেরেছি। আমি মনে করি এটার সংস্কার দরকার।’
নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মোস্তাক আহমেদও জানালেন, ছয়বার এখানে এসেছি। বধ্যভূমি সংস্কার করা দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল আবিষ্কৃত একটি গণকবরের ওপর স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। সেসময় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম এবং স্থানীয় কন্ট্রাক্টর জেবর মিয়া গণকবরটি খনন করেন। মৃত্যুকূপ থেকে বেরিয়ে আসে হাজারো মানুষের মাথার খুলি ও কঙ্কাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটি। ৯ মাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকার ও আল-বদররা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কাটাখালি, মাসকাটা দীঘি, চৌদ্দপাই, শ্যামপুর, ডাশমারী, তালাইমারী, রানীনগর ও কাজলার কয়েক হাজার নারী-পুরুষকে এখানে ধরে এনে হত্যা করে।

তাদের হাত থেকে রেহাই পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র, কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও। এই হলের পেছনে এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে ছিল বধ্যভূমি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকা এবং রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পাওয়া যায় আরও কয়েকটি গণকবর।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে