রাজশাহী অঞ্চলে আবারো বাড়ছে সংক্রমণ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২০; সময়: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী অঞ্চলে আবারো বাড়ছে সংক্রমণ

তারেক মাহমুদ : তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামতেই রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কিন্তু দিনে দিনে আক্রান্ত বাড়লেও, মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে চরম অবহেলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়াই বাজার-হাট, গণপরিবহনে চলাচল করছে। অথচ করোনা থেকে বাঁচতে শীতে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে রাজশাহী বিভাগে করোনায় গত তিন দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগের আট জেলায় এখন পর্যন্ত (২৭ নভেম্বর) করোনায় ৩৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পাঁচ দিন পর রাজশাহী বিভাগে শুক্রবার নতুন করে করোনাভাইরাসে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে এ দিন বিভাগে নতুন ৭০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৪০ জন।

শনিবার ( নভেম্বর) বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বিভাগের আট জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় ৩৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে। এর বাইরে চাঁপাইনবাববগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২৪ জন, নাটোরে ১২ জন, জয়পুরহাটে সাতজন, সিরাজগঞ্জে ১৪ জন এবং পাবনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ৪৯১ জন। এদের মধ্যে ২০ হাজার ৬৯০ জন সুস্থ হয়েছেন।

বিভাগজুড়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৬০৯ জন। কিন্ত অক্টোবরেও এই সংখ্যা ছিলো অনেক কম। বিভাগে গত মাসের বেশির ভাগ দিনে শনাক্তের সংখ্যা থাকতো ৩০ জনের নিচে। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে বর্তমানে আড়াই থেকে তিন গুন বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাজশাহী বিভাগের করোনা পরিসংখ্যানে মোট ৫৪ জন শনাক্ত রোগী। কিন্তু গত এক মাসের (১৮ অক্টোবর) এই দিনে শনাক্ত রোগী ছিলো মাত্র ১৬ জন।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে! তবে বিভিন্ন অসুখ বিসুখের কারণে করোনা পরীক্ষার হারও বেড়েছে কয়েকগুন। এদিকে, করোনা সংক্রমণ বাড়লেও সতর্কতার প্রতি অধিকাংশ মানুষেরই আগ্রহ নেই। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বলা হলেও মাস্ক ছাড়াই রাস্তাঘাট, শপিংমলে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষ, নিত্য প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। জনসমাবেশ, বিয়ে, পিকনিক, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান অব্যাহত আছে। সেগুলিতে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে নেই হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও নিয়ম মানছে না সিংহভাগ মানুষ।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘শীতে তাপমাত্রা ও কম আর্দ্রতা করোনাভাইরাসকে আরও বেশি সময়ের জন্য বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেবে। সেই সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে করোনাভাইরাস মানুষের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। শীতকালে নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও অন্যান্য সর্দিজনিত রোগের কারণে করোনায় মৃত্যুর হারও বাড়তে পারে।’ তাই সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ জানাচ্ছেন রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) এএনএম মঈনুল ইসলাম বলেন, শীতে যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। বিশেষ করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ‘নো মাস্ক নো সেবা’ এবং ‘নো মাস্ক নো বিক্রয়’ বাস্তবায়ন করতে বিভাগের আট জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে নিয়মিত।

  • 109
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে