রাজশাহীতে দখল হচ্ছে পদ্মা (ভিডিও)

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২০; সময়: ৩:৪০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে দখল হচ্ছে পদ্মা (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক : দূষণের মতো পদ্মা নদী দখলও করা হচ্ছে। শহর রক্ষা বাঁধ দখল করে স্থাপন করা হচ্ছে বৈধ-অবৈধ নানা ধরনের স্থাপনা। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধ। গবেষকরা বলছেন, দখলের ফলে শহর রক্ষা বাঁধ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলে পদ্মায় পানি বেড়ে গেলে বাঁধ ভেঙে শহর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া দখলের ফলে নদীর নাব্যতা হারিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তনও হয়ে যেতে পারে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় বুলনপুর থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ দখল করে নানা স্থায়ী স্থাপনা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া শহর রক্ষা বাঁধেও ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী স্থাপনাও স্থাপন করা হয়েছে। শক্ত বর্জ্য ফেলে নদী তীর দখলও করা হচ্ছে। এছাড়া পদ্মাতীর সংলগ্ন বাসিন্দারা বাসাবাড়ির আর্বজনা ফেলেও নদী তীর দখল করছে। এর ফলে শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর শ্রীরামপুরে শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পদ্মার বিশাল জমি দখল করে গড়ে তুলেছে সীমান্তে অবকাশ ও সীমান্তে নোঙর নামের দুইটি বড় স্থাপনা। সেখানে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করা হয়। এছাড়া একটি স্থায়ী কনফারেন্স সেন্টারও গড়ে তোলা হয়েছে।

পাঠানপাড়া শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পদ্মা নদীর পাড়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে লালন শাহ পার্ক। তার একাংশ পাঠানপাড়া ও দরগাপাড়ার স্থানীয় লোকজন অস্থায়ী গরুর গোয়ালে পরিণত করেছেন। সেখানে গরু রেখে লালন পালন করেন। এছাড়া বড়কুঠি সংলগ্ন এলাকায় পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ২০-২৫টি অস্থায়ী দোকানপাট।

এছাড়া শহর রক্ষা বাঁধের ওপর রয়েছে অস্থায়ী দোকানপাট ও আওয়ামী লীগে বেশ কয়েকটি দলীয় ওয়ার্ড কার্যালয়। কুমারপাড়া পদ্মার পাড়ে প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের ভ্যান থেকে শক্ত ময়লা আবর্জনা ফেলে পাড় দখল করা হচ্ছে। অনেকে তাদের বাসাবাড়ির নিচে শক্তভাবে পদ্মা নদীর পাড় দখল করে নিচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ‘নদীতে সলিড কিংবা লিকুইড কোনো বর্জ্য ফেলা উচিত না। এটা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ লিকুইড বর্জ্য পানিতে মিশে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি । এর ফলে জলজ প্রাণী মারা যায়।

‘আর সলিড বর্জ্য ফেলা হলে কিংবা নদীর পাড়ে বা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসতি গড়ে তোলা হলে তা নদীর পাড়কে দুর্বল করে দেয়। শহর রক্ষা বাঁধের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। রাজশাহীতে এমনিতে বাঁধের পাশে নদীসংলগ্ন এলাকায় বসতি রয়েছে যা শহর রক্ষা বাঁধের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব অবশ্যই সরিয়ে ফেলা উচিত।’

গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ‘রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ২২ মিটার উঁচু হলে বাঁধ থেকে দুই মিটার নিচে রয়েছে শহর। ফলে বাঁধকে রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাঁধকে রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, ‘ব্রিটিশ আমলে যখন শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয় তখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এই জন্য বাঁধের পাশের জমি খাস জমি হিসেবে পরিগণিত হয়। খাস জমির মালিক জেলা প্রশাসক। বিজিবি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লিজ নিয়েই তাদের রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনা করছে।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম জানান, শহর রক্ষা বাঁধের কোনো জমি কেউ লিজ নেয়নি। খাস খতিয়ান জমি হলেও কেউ কোনো অনুমতি বা লিজ নেয়নি। তবে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ থেকে সিমলা পার্ক পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের জায়গা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে। সেই মামলায় হাইকোর্ট একটি স্ট্যাটাস কো দিয়েছেন।

  • 100
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে