রাজশাহীর দুর্গম চরে ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২০; সময়: ৩:২১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর দুর্গম চরে ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পদ্মার দুর্গম চরে এক সময় বাহন হিসেবে চলতো শুধু গরু-মহিষের গাড়ি। তবে গেল কয়েক বছর ধরে এই চরের মানুষের বাহনের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক। চরের একটি গ্রামের অন্তত ৪০ জন যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গ্রামটির নাম চর মাজারদিয়া। এটি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটি রাজশাহী শহরের সামনে, পদ্মা নদীর ওপারে। একেবারেই ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই গ্রাম পড়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) দামকুড়া থানার অধীনে।

চর মাজারদিয়া যেতে হলে রাজশাহী শহরের পাশ দিয়েই বহমান পদ্মা নদীতে নৌকায় চড়তে হয়। বর্তমানে পদ্মা ছোট হয়ে নৌপথ কমেছে। বেড়েছে পায়ে হাঁটা পথ। এই চরের বালু, কাঁদা আর হাঁটুপানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। চরযাত্রা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে বাইকগুলো।

জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও তারা এমন সংকীর্ণ পথে বাইক চালাতে পারেন। এখানে অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তাদের কেউ ধরে না। এখানকার চালকেরা খুব দক্ষ।

চর মাজারদিয়া গ্রামের যুবক শামিম হোসেন (২৯) পাঁচ বছর ধরে ভাড়ায় বাইক চালান। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় তার। নদীপাড় থেকে গ্রামে এনে দিলে একজন আরোহী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দেন। যারা গ্রামে নিয়মিত আসেন তারা ফোন নম্বর রাখেন। ফোন করলেই তারা নদীপাড়ে চলে যান। আরোহীকে নিয়ে আসেন। কাজ শেষে আবার নদীতীরে রেখে আসেন।

সবে কৈশোর পার করা নাঈম হোসেন (১৮) চরের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তার বাবা শেখ সাদ কৃষক। সংসারে বাবাকে সহায়তা করতে নাঈমও বাইক চালান। নাঈম বলেন, চরে বাইক চালাতে তার ভালই লাগে। দুইবছর ধরে তিনি বাইক চালান।

গ্রামের আরেক বাইক চালক ভাষান (২৫) বলেন, এই চরে কৃষি ছাড়া তেমন কোন কর্ম নেই। তাই আগে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক বহনের কাজ করতেন। এখন অবৈধ পথ ছেড়ে বাইকে উঠেছেন। ভাষান বলেন, আমি শো-রুম থেকে কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। এক বছরের মধ্যে কিস্তির সমস্ত টাকা পরিশোধ করেছি। এখন বৈধ পথে ৪০০ টাকা আয় হলেই আলহামদুলিল্লাহ। আর কিছু করা লাগে না।

বাইক চালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আগে তিনি গরু চরাতেন। কিন্তু দিন দিন চরে চাষবাস বেড়ে যায়। কমে যায় গো-চারণভূমি। তাই তিনিও বাইক চালানো শুরু করেন। তার মতো ৩৫ থেকে ৪০ জন যুবক বাইক চালান। এদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন সব সময় বাইক চালান। বাকিরা মাঝে মাঝে চালান। এই চরে পুলিশ-প্রশাসনের বড় কর্তা বা জনপ্রতিনিধিদের যিনিই আসেন না কেন তাদের ডাকা হয়। তারা সব সময় প্রস্তুত থাকেন।

পবার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, চরে চলাচল অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে ভাড়ায় চালিত বাইক। আগে দেখা যেত চলাচলের সমস্যার কারণেই অনেকে এই চরে আসতেন না। এখন সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে আসেন। আমরা অনেক উপকৃত হচ্ছি।

  • 1.7K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে