করোনাকালে রাজশাহীতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২০%

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২০; সময়: ১১:১২ পূর্বাহ্ণ |
করোনাকালে রাজশাহীতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২০%

তারেক মাহমুদ : কেভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বিশ্বব্যাপী। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আবিষ্কর না হওয়ায় উপসর্গভিত্তিক (সিমটোমেটিক) চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এর ধারাবাহিকতায় বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো অ্যাজিথ্রোমাইসিন । ফলে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও ওষুধটির বিক্রি বেড়ে গেছে ।

রাজশাহীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। অ্যাজিথ্রোমাইসন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনকারীদের মধ্যে অন্যতম এ প্রতিষ্ঠান চার ক্যাটাগরিতে অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রস্তুত করে। ট্যাবলেটের দাম- প্রতিপিস ৩৫ টাকা, ক্যাপসুল ২৫ টাকা, ড্রাই পাউডার ফর সাসপেনশন ৯৫ টাকা ও ইনজেকশন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তাদের দেয়া তথ্য বলছে, করোনাকালে এ অ্যান্টিবায়োটিকটির চাহিদার প্রেক্ষিতে ঢাকাতে তাদের উৎপাদনও বাড়াতে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে মোট বিক্রয় হতো ৬ থেকে ৮ শতাংশ। এমনিভাবে সকল কম্পানি তাদের ওষুধের উৎপাদন বাড়িয়েছে চাহিদা বেশি থাকায়। আর বিক্রি অনেক বেশি বেড়ে গেছে।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও ওষুধ বিপণনে রিপ্রেজেনটিভদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাকালের শুরুতে রাজশাহীতে মার্চ ও মে মাসে মাসে এ ওষুধটির বিক্রি বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। এপ্রিলে থেকে মে একই ধারা বজায় ছিল। মাঝের কয়েক মাস একটু কমলেও শীত বাড়ার সাথে সাথে এই অ্যান্টিবায়োটিক আগের মত বর্ধিত হারে বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বড় বড় কম্পানিগুলো নয়, যে সব কম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক ওধুষ রয়েছে তারাও তাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) রামেক হাসপাতালের সামনে থাকা বিভিন্ন কম্পানির রিপ্রেজেন্টিভরা জানালেন, করোনাকালে অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের ওষুধ সেবনের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক বাড়িয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বাজারের চাহিদার প্রেক্ষাপটে ওষুধ উৎপাদন বাড়িয়েছে। চিকিৎসকরাও আগের চেয়ে অনেক বেশি এই ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন। আর করোনার উপসর্গ দেখা দেয়ার ক্রেতারা বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন গ্রুপের অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধটি কিনছেন।

রামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত স্কায়ার লিমিটেডের রিপেজেন্টভ সুমন কুমার মজুদার জানান, করোনার প্রথম সময়ে এই ওধুষটি চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়। মাঝে একটু কম বিক্রি ছিলো কিন্তু শীত বাড়ার সাথে সাথে জ্বর, সর্দিসহ নানান রোগ বেশি হয় । ফলে আবারো চাহিদা বেড়েছে।

রামেক হাসপাতালের বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালের রিপ্রেজেন্টিভ আব্দুল আলিম জানান, এই অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের ওধুষ বিক্রি বেড়েছে করোনার পর থেকেই। কারণ এই অ্যান্টিবায়োটিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মানুষের শরীরে কাজ করে।

রিপ্রেজেন্টিভদের কেউ কেউ বলেন, যদিও প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির নিয়ম নেই। কিন্তু বাংলাদেশে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয়। এ কারণে এ ওষুধটি বিক্রি বেড়েছে। তারা বলেন, অ্যাজিথ্রোমাইসন হলো আরেকটি প্রটোকল। চিকিৎসকদের তরফ থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি ওষুধটির চাহিদা বেড়েছে। আইভারমেট্রিন প্লাস ডক্সসিাইক্লনি এবং আইভারমেপ্রিন প্লাস অ্যাজিথ্রোমাইসন দুই ধরনের প্রটোকল। অনেকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন বেশি পছন্দ করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরাও অ্যাজিথ্রোমাইসন বেশি লিখছেন ব্যবস্থাপত্রে।

এদিকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি এবং ব্যবহারে বিধিনিষেধ থাকলেও করোনাকালে সেটা অনেকটাই শিথিল হয়েছে। রাজশাহীতে উপজেলাগুলোতে অহরহ ব্যবহার হচ্ছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক। শহরেও অনেকে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করেছেন। এমনও অনেক চিত্র দেখা যাচ্ছে, করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এমন অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে ফার্মেসিগুলোতে আসছেন ক্রেতারা। ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই চাহিদা জানাচ্ছেন তারা।

ফার্মেসিগুলোতে না দিতে চাইলে বিক্রেতাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে কিনছেন অ্যান্টিবায়োটিক। পরিবারের সবার জন্য বাড়িতে মজুদ করছে এসব ওষুধ।

রাজশাহীর লক্ষীপুরে অবস্থিত ওল্ড রাজশাহী ফার্মেসী, দাদু ফার্মেসী, পপুলারসহ সাহেববাজারের মুন লাইট, সানলাইটসহ অন্যান্য ওধুষের দোকানে কথা বলে জানা যায়, ঠান্ডা ও হাঁপানিজনিত নিউমোনিয়া, সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জির ওষুদের বিক্রি বেড়েছে। শরীরে নানা ধরনের ‘প্যারাসাইট’ আক্রমণ প্রতিহত ও ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ প্রতিরোধ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা এখন বেশি। প্যারাসিটামল, ভিটামিন-সি, জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন সম্পূরক ওষুধের ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অ্যজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকত ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে। ৩৩ শতাংশ ডায়রিয়া রোগীকে এই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেওয়া হত।

এখন নিউমোনিয়াজনিত রোগের জন্য যে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার হচ্ছে, করোনার আগে এ হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ। করোনাকালের আগে সর্দি -কাশি বা জ্বরের জন্য এ অ্যান্টিবায়োটিক সামান্য পরিসরে ব্যবহার হতো। এছাড়া জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায়, সেপ্টেসেমিয়া বা রক্তদূষণের রোগীদের ৩ শতাংশ ও মূত্রনালির সংক্রমণজনিত কারণে ১২ শতাংশ রোগীদের অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন চিকিৎসকরা।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. পার্থ মণি ভট্রাচার্য বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার
আগেও আমাদের দেশে ছিল। অ্যান্টিবায়োটিক আসলে জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধ। তবে এটি চিকিৎসকদের পরামর্শে না খেলে সমস্যা হবে। তাই সকল অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে নিয়ম মেনে চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে।

  • 21
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে