মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় দূর্গাপুরের শতবর্ষী লক্ষ্মী রানী

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২০; সময়: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ |
মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় দূর্গাপুরের শতবর্ষী লক্ষ্মী রানী

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামের বাসিন্দা দশরথ চন্দ্র কবিরাজ। শিক্ষকতা করতেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মুক্তিযুদ্ধকালীন এলাকায় সংগঠকের কাজ করেছেন। তার এক ছেলেও প্রত্যক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম রাজশাহীর কৃতী সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন দশরথ চন্দ্র কবিরাজ। রাজশাহী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের বহু আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন তিনি।

কেবল আওয়ামী লীগ করায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হয়েছে দশরথ কবিরাজের পরিবার। দুই দফায় পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের বসতবাড়ি।

নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে এক রকম বিনা চিকিৎসায় ২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট মারা যান দশরথ চন্দ্র কবিরাজ । কিন্তু বেঁচে আছেন তার স্ত্রী লক্ষ্মী রানী। ১০৩ বছর বয়সী লক্ষ্মী রানী এখন পৌঁছে গেছেন জীবনের শেষ প্রান্তে।

এ অবস্থায় মৃত্যুর আগে অন্তত বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান এই বৃদ্ধা। জানাতে চান আওয়ামী লীগ করায় তার পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন, নিপীড়ন ও দুঃখের কথাগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মী রানীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৫ মে। বাল্যকালে দশরথ চন্দ্র কবিরাজের ঘরে বধূ হয়ে আসেন লক্ষ্মী রানী। দশরথের ঘরের লক্ষ্মীই ছিলেন তিনি। তিনি সাত সন্তানের জননী।
ভারত বিভাগ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের সব আন্দোলন-সংগ্রাম দেখেছেন কাছ থেকে। মুজিব আদর্শে স্বামীর এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গীও ছিলেন লক্ষ্মী রানী।

লক্ষ্মী রানী জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরপরই হানাদার বাহিনীর দোসররা তাদের বাড়িতে আগুন দেয়। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু ছিল তাদের। সবকিছু লুটে নিয়ে যায় রাজাকারের দল। ওই আগুনে পুড়ে যায় পুরো গ্রাম। প্রাণ বাঁচাতে তারা পদ্মা পাড়ি দিয়ে সীমান্তের ওপারে ভারতের দেবীপুর ধনিরামপুর সাগরপাড়ায় গিয়ে ওঠেন। সেখানকার কাজিপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে প্রথমে তাদের ঠাঁই হয়েছিল।

সেখানে থেকে দশরথ কবিরাজ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন তিনি।

এক পর্যায়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ধনিরামপুর সাগরপাড়ার স্কুল শিক্ষক আমীর হামজার। ওই শিক্ষকই নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন দশরথের পরিবারকে। সেখান থেকে তার বড় ছেলে দিজেন্দ্রনাথ কবিরাজ অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে নিজ ভিটায় ফেরেন। এসে দেখেন ঘরবাড়ি কিছুই নেই। তারপর গ্রামের লোকদের সহায়তায় মাটির দেয়াল তোলেন। আবারো শুরু হয় নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম। দশরথ কবিরাজ শুরু করেন শিক্ষকতা। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় দেশ গঠণে অংশ নেন।

লক্ষ্মী রানী বলেন, আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে আমার পরিবার মিশে আছে। আওয়ামী লীগ করার কারণে বহু নির্যাতন আমাদের সইতে হয়েছে। তবু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে এখনও টিকে আছি।

তিনি বলেন, ২০০০ ও ২০০১ সালে আমার বাড়িতে দুই দফা আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী। সবকিছু লুটে নিয়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে সন্তানরা বিভিন্ন দিকে চলে গেছে। তাদের আর একত্র করতে পারিনি। বাড়িতে থাকতে না পেরে সন্ত্রাসী হামলার ক্ষত নিয়ে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে তিনি স্বজনদের বাড়িতে লুকিয়ে আশ্রয় নেন। এবাড়ি-ওবাড়ি করে দিন কেটেছে তাদের। পালিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। সেই সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। এক সময় বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যান।

লক্ষ্মী রানী বলেন, আমার পরিবারের এই করুণ পরিণতির কথা তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পায় আমার স্বামী। ওই সময় আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে বিচারের আশ্বাস দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ হাতে আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস শেখ হাসিনা দশরথ চন্দ্র কবিরাজের পরিবারের ওপর নির্যাতনের কথা ভুলে যাননি। আমার জীবন শেষের দিকে। জানি না কখন মারা যাব। জীবনের না বলা কিছু কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলে মরতে চাই।

দশরথ চন্দ্র কবিরাজের ছেলে সুকুমার চন্দ্র জানান, তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। তিনি ছাত্রলীগ করতেন ১৯৮৩ সালে। তারপর যুবলীগ করতেন। ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন ১৯৮৯ সালে। এখন পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদে রয়েছেন। তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান। এটি তার শেষ ইচ্ছা। জানি না তার সেই ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা।

  • 120
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে