মোহনপুরে বৃদ্ধা কোহিনুরের রোজগারে পথ বন্ধ করলো গ্রামপ্রধান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২০; সময়: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ |
মোহনপুরে বৃদ্ধা কোহিনুরের রোজগারে পথ বন্ধ করলো গ্রামপ্রধান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, মোহনপুর : ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রায় ৪০ বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কোহিনুরের ছাগল প্রজননের কাজটুকুও বন্ধ করে দিয়েছে গ্রাম প্রধান ও সমাজপতিরা।

সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার ধূরইল ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের সামশুল হকের স্ত্রী হতদরিদ্র কোহিনুর ছাগল প্রজননের মাধ্যমে পরিবার পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ওই হতদরিদ্র পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে ,বাস্তবায়নকারী সংস্থা শতফুল এনজিও বাংলাদেশ পাঁঠা পালন ও প্রজননের লক্ষ্যে (প্রজনন) প্রদর্শনী খামার পাঁঠা পালনের মাচাসহ বিনামূলে দু’টি পাঁঠা বিনামূল্যে বিতরণ করেন।

আক্রোশের শিকার কোহিনুর এই প্রতিবেদককে জানান, তার শ^শুর আমল থেকেই তাদের পরিবারে ছাগল প্রজননের ব্যবসা চলে আসছে। তিনি বলেন, ছাগল প্রজননের জন্য তার বাড়িতে দুটি পাঁঠা ছিল। এনজিও শতফুল বাংলাদেশ বিনামূল্যে আরো দুটি পাঁঠা দিলে ৪টি পাঁঠা দিয়ে খরচ বাদ দিলে গড়ে প্রতিদিন ৩০০/- টাকা আয় হতো। এই টাকা দিয়ে পরিবারের ৬ জন সদস্যের মানবেতর জীবিকা চলতো।

এরই মধ্যে হঠাৎ করে গত ১৬ অক্টোবর শুক্রবার শিবপুর খুলুপাড়া মসজিদের মুয়াজ্জিন আবেদ আলী, গ্রাম প্রধান সোহরাব, একই গ্রামের খলিলের ছেলে মুরসালিন প্রমুখদের নেতৃত্বে একটি দল আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে তার বাড়িতে ছাগল প্রজননের কোন কাজ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন এবং সেই সাথে ৭ দিনের মধ্যে পাঁঠা বিক্রির জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু ১ সপ্তাহের মধ্যেই বৃদ্ধা কোহিনুর পাঁঠা বিক্রি করতে না পারায় গত ২৩ অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে আবারো মসজিদের মুয়াজ্জিন আবেদ আলী, গ্রাম প্রধান সোহরাব হোসেন, মুরসালিনরা কোহিনুরের বাড়িতে এসে পাঁঠা বিক্রি না করার কারণ জানতে চান।

এতে করে কোহিনুরের ছোট ছেলে মাহাবুরের সাথে আবেদ আলী দিং বির্তকে জড়িয়ে পড়লে শিবপুর গ্রামের খলিলের ছেলে মুরসালিন, মাহাবুরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারধর করে। মসজিদের কতিপয় মুসল্লি শতফুল বাংলাদেশের সাইনবোর্ড হেঁচকা টানে খুলে ফেলে সেই সাথে পাঁঠা রাখার জায়গাটিতে ভাংচুর চালায় এবং তড়িঘড়ি করে স্বল্প মূল্যে ৪টি পাঁঠা বিক্রি করতে বাধ্য করে।

মারধরের শিকার মাহাবুর জানায় মোহনপুর থানায় অভিযোগ করলে তার চিকিৎসা বাবদ ২৫০০ টাকা দেয়া হয়। এ বিষয়ে শিবপুর খুলু পাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গ্রাম প্রধান ও মসজিদের মুসল্লীর স্বার্থে এবং গ্রাম পবিত্র রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যদিও বৃদ্ধা কোহিনুরের বাড়ি থেকে খুলুপাড়া মসজিদের দূরত্ব প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার। ৪০ বছর ধরে ওখানে ছাগল প্রজননের কাজ চলে আসছে। এতোদিন প্রতিবাদ করেননি কেন? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে মুয়াজ্জিন আবেদ আলী নীরব ভূমিকা পালন করেন। এ যেন শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী’ গল্পের মৃতুঞ্জয়কে তাড়িয়ে গ্রাম পবিত্র করার অপতৎপরতা। ওদিকে ছাগল প্রজননের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃদ্ধা কোহিনুরের পরিবার অর্ধাহার-অনাহারে জীবন যাপন করছেন।

গ্রাম প্রধান সোহরাব হোসেনের যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) মোস্তাক আহম্মেদ জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানওয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

  • 46
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে