শীতে করোনার দ্বিতীয় টেউ প্রতিরোধে রাজশাহী জুড়ে প্রস্তুতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২০; সময়: ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ |
শীতে করোনার দ্বিতীয় টেউ প্রতিরোধে রাজশাহী জুড়ে প্রস্তুতি

তারেক মাহমুদ : শীতকালে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায় মোকাবেলায় প্রস্তুতি চলছে রাজশাহী অঞ্চলেও। শীতের শুরুতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আট দশদিন থেকে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। মাস্ক না পড়া, সামাজিক দূরত্ব কমে যাওয়া, গণপরিবহনে দরজা-জানালা বন্ধ থাকা, সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হওয়ায় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সময় সচেতন না হলে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ আছে। কার্যকর কোনো টিকা না আসা পর্যন্ত করোনাভাইরাসকে ঠেকানো মুশকিল বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে রামেক হাসপাতালে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগি চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৬ জন।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২ নভেম্বর রোগি ছিলো ২১ জন। ১০ দিন পরে রোগি বেড়ে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রোগি সংখ্যা ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে এক হাজার ২৮৭ বেড। এর মধ্যে ২৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এছাড়াও মজুদ করা হচ্ছে অক্সিজেন। জানিয়েছে রাজশাহী স্বাস্থ্য দপ্তর।

তবে ‘নো মাস্ক নো সেবা’ এবং ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাজশাহীর সাহেববাজার এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাস্ক না পরায় কয়েকজনের জরিমানা করা হয়।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, করোনার দ্বিতীয় পর্যায় মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা রোগিদের জন্য আট জেলায় আপাতত এক হাজার ২৮৭টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে।

ডা. গোপেন্দ্র নাথ বলেন, রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঁচটি ল্যাব রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে দুইটি, বগুড়ায় দুইটি ও সিরাজগঞ্জে একটি। পাঁচটি ল্যাবে প্রতিদিন ৯৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন ও আইসিটি) এএনএম মঈনুল ইসলাম বলেন, শীতে যাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। বিশেষ করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নো মাস্ক নো সেবা এবং নো মাস্ক নো বিক্রয় বাস্তবায়ন করতে বিভাগের আট জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হবে। এ কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।

এদিকে, রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের দুইটি পিসিআর ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। প্রতিদিন দুই ল্যাবে ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও নওগাঁ জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় এই দুই ল্যাবে।

ডা. এনামুল বলেন, রাজশাহীতে তিনটি হাসপাতালে করোনা রোগির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু রোগি কমে যাওয়ায় দুইটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ হাসপাতালে করোনা রোগিদের জন্য ১০৮টি বেড রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ ২০টি।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তারের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৫৬২ জনে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩২২ জন এবং সুস্থ্য হয়েছেন ২০ হাজার ১১৬ জন। তিনি জানান, রাজশাহী বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ বগুড়ায় ৮ হাজার ৩১৫ জন। এছাড়াও নগরীতে ৩ হাজার ৯১১ জনসহ রাজশাহীতে ৫ হাজার ২৯১ জন।

এদিকে এ পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাদের মধ্যে রয়েছে, রাজশাহীতে ৫ হাজার ১৩ জন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও লিভার বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ হারুণ আর রশীদ জানান, ‘শীতে তাপমাত্রা ও কম আর্দ্রতা করোনাভাইরাসকে আরও বেশি সময়ের জন্য বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেবে। সেই সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে করোনাভাইরাসটি মানুষের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। শীতকালে নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও অন্যান্য সর্দিজনিত রোগের কারণে করোনায় মৃত্যুর হারও বাড়তে পারে।’

যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার দাবি, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়ে শীতকালে এ ভাইরাসটির প্রভাব আরও বাড়তে পারে।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ পার্থ মণি ভট্রচার্য জানান, শীতে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভবনা থাকে। কয়েকটি কারণে শীতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় খুব দ্রুত ড্রপলেট শুকিয়ে যাবে। মাস্ক না পড়লে কাশি, সর্দির সঙ্গে আসা জীবাণু বাতাসে বেশি সময় ভাসমান থাকবে। এ ছাড়া শীতে ধুলা বেড়ে যায়। ধুলাও জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে। ঘর, বাসের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে জীবাণু ভেসে বেড়াবে, মাটিতে পড়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। ঘরের ভিতরে বেশি মানুষ থাকলে আরও বেশি জমবে, ভাইরাসের সংক্রমণ হার বেড়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন,‘সর্দি , কাশি, ঠান্ডা লাগলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। যা শীতে সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ। এ ছাড়া বিয়ে, পিকনিকসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কমিয়ে ফেলিনি। পদক্ষেপ যেগুলো নিয়েছি কোনোটাই সম্পর্ণ হয়নি। সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই শীতের সময় এই সকল বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • 97
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে