সিনিয়রের তথ্য গোপন করে জালিয়াতি করা সেই শিক্ষকই পেয়েছেন পদোন্নতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২০; সময়: ৭:১৫ অপরাহ্ণ |
সিনিয়রের তথ্য গোপন করে জালিয়াতি করা সেই শিক্ষকই পেয়েছেন পদোন্নতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : ১৯৯৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রভাষক পদে যোগদান করেন পৌরনীতি বিষয়ের শিক্ষক মোহাঃ হোসেন কবির। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানে প্রভাষক পদে যোগদান করেন জীব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মোঃ সামরুল হক। কিন্তুু তথ্য গোপন করে সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য চলতি বছরের ৯ মে আঞ্চলিক পরিচালক (শিক্ষা) রাজশাহী অঞ্চল বরাবর আবেদন করেণ জুুনিয়র শিক্ষক মোঃ সামরুল হক। তার যোগদানের তারিখ ঠিক রাখা হলেও হোসেন কবিরের যোগদান দেখানো হয়েছে ২০০২ সালের ৭ জানুয়ারি। আর জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে জুনিয়র শিক্ষক সামরুল হকের পদোন্নতির জন্য উ”চতর স্কেলের সুপারিশ করে আঞ্চলিক পরিচালক (শিক্ষা) রাজশাহী অঞ্চল এর নিকট শিক্ষক প্যাটার্ন জমা দেন অধ্যক্ষ।

এদিকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি না দেওয়ার জন্য চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক পরিচালক (শিক্ষা) রাজশাহী অঞ্চল এর নিকট অভিযোগ করেন সিনিয়র শিক্ষক মোহাঃ হোসেন কবীর এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুপারিশের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেও তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই জুনিয়র ওই শিক্ষকের পদোন্নতির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে সুপারিশ প্রতিবেদন পাঠান আঞ্চলিক পরিচালক। আর জালিয়াতির মাধ্যমেই সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান সেই জুনিয়র শিক্ষক সামরুল হক। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ও তথ্য গোপন করে জুনিয়র শিক্ষককে পদোন্নতির এই অভিযোগ করেছেন পদোন্নতি বঞ্চিত সিনিয়র শিক্ষক মোহাঃ হোসেন কবির।

বিষয়টি নিয়ে কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামারুজ্জামান, পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষক মোহাঃ সামরুল হক, রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক, উপ পচিালক ও মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন সিনিয়র শিক্ষক হোসেন কবির।

হেসেন কবির বলেন, অধ্যক্ষ বিষয়টি আমলে না নিয়ে উচ্চতর স্কেলের জন্য শিক্ষক প্যার্টানে জমা দেওয়া কাগজপত্র স্ক্যান করে যোগদানের তারিখ ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জীববিজ্ঞানের প্রভাষক সামরুল হককে সিনিয়র হিসেবে উল্লেখ করে আঞ্চলিক অফিসে তালিকা পাঠান। অধ্যক্ষের পাঠানো তথ্যর ভিত্তিতে রাজশাহীর আঞ্চলিক অফিস জীববিজ্ঞানের জুনিয়র শিক্ষক প্রভাষক মোঃ সামরুল হককে পদোন্নতি দেন। ইতোমধ্যে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে (এমপিওভুক্ত) তার জুলাই মাসের বেতনও চলে এসেছে। সে কারণেই গত আগষ্ট মাসে মামলা করেছি। (মামলা নং-১৫/২০২০)

এর আগে, গত ৮ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (ঢাকা) এর উপপরিচালক ও মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। গত ২৯ জুন বিষয়টি তদন্ত করে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই বিষয়ে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সরেজমিন ঘটনা তদন্ত করতে কলেজে যান রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (কলেজ, চলতি দায়িত্বে) ড. আবু রেজা আজাদ। তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যান আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. কামাল হোসেন নিজেই।
মুঠোফোনে কথা হলে অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসেন বলেন, অভিযোগের পর অধ্যক্ষের পাঠানো কাগজপত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরেজমিন তদন্ত করে অধ্যক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। তবে নিয়মমাফিক যার প্রাপ্য তিনিই পদোন্নতি পাবেন।

অধ্যক্ষ কামারুজ্জামান বলেন, প্রভাষক মোঃ সামরুল হককে কাগজগুলো স্ক্যান করে অনলাইনে পাঠাতে বলেছিলাম। কাগজপত্র স্ক্যান করতে গিয়ে তিনি ভুল করেছেন বলে লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন। সে কারণে আমি তাকে শোকজও করেছি। প্রভাষক মোঃ সামরুল হক বলেন, স্যারেন্ডার করে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করা হবে। যা কিছু হয়েছে সিস্টেম অনুযায়ী।

  • 15
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে