রাজশাহী সেফহোমে দ্বিগুনের বেশী হেফাজতি, চিকিৎসা দেন নার্স

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২০; সময়: ১২:৪৮ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী সেফহোমে দ্বিগুনের বেশী হেফাজতি, চিকিৎসা দেন নার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র (সেফহোম)। এই কেন্দ্রে মহিলা-শিশু-কিশোরী হেফাজতিরা থাকেন। কিন্তু বর্তমানে আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এনিয়ে শান্তিতে নেই এখানকার নারী ও শিশুরা। নির্ধারিত সংখ্যায় আসন সংখ্যার প্রায় আড়াইগুণ নারী পুরুষ থাকছেন এ নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে। ফলে নানান সমস্যায় দিন কাটছে হেফাজতিরা।

রাজশাহীর বায়া সরকারি সেফহোমের তথ্য মতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নগরীর বায়া এলাকায় অবস্থিত সেফহোমটি আগে বৃদ্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হেেতা। এখানকার দুইটি সেডে অসহায় বৃদ্ধরা থাকতেন। পরে বৃদ্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্রটি বিলুপ্ত করে একে মহিলা-শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র করা হয়। বর্তমানে এখানকার দুইটি সেডের একটিতে হেফাজতিরা রয়েছেন।

এখানকার আসন সংখ্যা ৫০ জন হলেও সেখানে বর্তমানে আছেন ১২৩ জন। এরমধ্যে প্রতিবন্ধি রয়েছেন ৫৭ জন। এদের সাহায্যের জন্য যে কয়েকজন আয়া থাকার কথা তাও নেই। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন একজন উপ তত্বাবধায়ক, ২ জন আয়া, ২ জন বাবুর্চি এবং সুইপার, নার্স, ও গার্ড আছেন একজন করে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য আছেন ১১ জন আনসার সদস্য রয়েছে।

আবাসন সংকট থাকলেও নিয়ম না মেনে সেফহোমের ভেতরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পাঁচ কর্মচারীরা। তাদের দাপটে সেফহোমের হেফাজতিদের স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। জানা গেছে, অপর সেডটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন সেফহোমের ৫ কর্মচারী। আয়া, বাবুর্চি, গার্ড, নার্স ও তত্বাবধায়িকা। সেফহোমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য কোনো কোয়ার্টার নেই।

বসবাসরত তারা সরকারি খরচে ব্যবহার করছেন বিদ্যুৎ ও পানি। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা এলে সেফহোমের ভেতরে হেফাজতিদের সঙ্গেই বসবাস করেন। এছাড়াও নিরাপত্তা দেয়া আনসার বাহিনীর ১১ জন সদস্যও অবস্থান করেন সেখানেই। এতে একদিকে যেমন হেফাজতিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থ ও সম্পদ।

এদিকে আবাসন সংকটের কারণে এখানে থাকা অনেকেই থাকছেন একজনের জায়গায় দুই জন। কেউ কেউ আবার বেছে নিয়েছে নিজের জায়গা। সেখানকার মেঝেতেই ঠাই মিলছে তাদের। তাদের চিকিৎসা সেবাও অপ্রতুল। নেই ডাক্তার। চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন নার্স। নিরাপত্তার এ জায়গাতে থাকা অনেকের নষ্ট হচ্ছে শিক্ষা জীবন। এখানে পাঠ দানের নেই ব্যবস্থা। নেই বিনোদনের সুযোগ।

সেফহোমের তত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক বলেন, তাদের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়া হচ্ছে। তবে আসন সংকট রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য যথেষ্ট আয়াও নেই। ফলে এসব নিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। বিষয়গুলো সমাজ সেবা অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। একটি ৫ তলা বিল্ডিং অনুমোদন হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ বলেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান হবার কারণে এখানে প্রতিনিয়ত দ্বিগুন সংখ্যক হাজতী থাকছেন। তারা কোর্টের মাধ্যমে এখানে আসেন। আমরা কোর্টকে এবিষয়ে অবহিতও করি। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। এজন্য আবাসন সংকট থেকেই যাচ্ছে।

আর সেখানে কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থাই কম। তাই বাড়তি কোন লোকবল দেয়াও সম্ভব নয়। এছাড়া এখানে আয়াসহ অন্যান্যদেরকে শেড ছেড়ে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা সেখানে আর থাকবে না। এছাড়া আবাসন সংকটের বিষয়টি অধিদফতরে বলা হচ্ছে। নতুন করে একটি প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

  • 31
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে