বাগমারায় সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২০; সময়: ৮:০৭ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় সরকারি খাল প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে বিলের পানি নামতে না পেরে আবাদী জমি অকেজো হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হয়নি বলে কৃষকরা দাবি করেছেন।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা এলাকায় শ্রীধারপুর নামক স্থানে সরকারী খাল দখল করে মাছচাষ করছেন। ছিদ্দিরপুর, ইসলাবাড়ি, বাসুপাড়া, নরসিংহপুর হয়ে খুজিপুর বারনই নদীতে একটি পুরাতন পানি প্রবাহিত খাল রয়েছে। এই খালটি দখল করে স্থানীয় মোহম্মাদপুর গ্রামের আবু বাক্কার, ইসলাবাড়ি গ্রামের আতাউর রহমান, আইনাল আলী, নন্দনপুর গ্রামের সাঈদ আলীসহ একাধিক ব্যক্তি নিজ স্বার্থে খাল দখল করে পানি নামার রাস্তা বন্ধ করে মাছচাষ করছেন। এতে করে মাধাইমুড়ি, নন্দনপুর, সগুনাসহ কয়েকটি বিলের পানি নামা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি প্রবাহিত খাল ও ব্রীজ বন্ধ করে মাছচাষের কারণে ওই এলাকার ১০/১২টি গ্রামের লোক বর্ষাকালে পানিবন্দীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

এসময় অনেকের মাটির বাড়ি জলাবদ্ধতায় ধ্বসে পড়ে। এবারে অতিরিক্ত বর্ষা ও বন্যায় বিলের পানি খাল দিয়ে নদীতে না নামার কারণে ওই এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমিতে রবি মওসুমের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগকারী নন্দনপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ, আমজাদ হোসেন, সাহেব আলীসহ অর্ধশতাধিক কৃষক জানান, যুগ যুগ ধরে এই এলাকার পানি সরকারী খাল দিয়ে নদীতে যায়। কিন্তুু প্রভাবশালীমহল গত ২/৩ বছরে ওই পানি নামার রাস্তায় বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করছে। মহলটি এমনই প্রভাবশালী যে সরকারী ভাবে নির্মিত ব্রীজ/কালভার্ট বন্ধ করে দিয়েছে। পানি প্রভাহের খালে বাাঁধ থাকায় ওই এলাকায় গত দুই বছর ধরে রবি মওসুমের ফসল করতে তারা পারছেন না। এছাড়া এবারে অতিরিক্ত পানি হবার কারণে ওই এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে বোর ধানও করতে পারবেন না বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ইতি মধ্যে বোর মওসুমের বীজ ধান রোপনের সময় কিন্তুু পানি থাকায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এদিকে প্রভাবশালীদের দাপটে কোনঠাসা কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পানি বর্তমানে কমলেও আসে পাশের জমির পানি নামতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বাসুপাড়া ইউনিয়নের সদস্য আবুল কালাম বলেন, কিছু স্বার্থনেষী লোকজন খালটি নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এতে পানি নামতে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে ওই এলাকায় বিশৃংখলার সৃষ্টি হবার আশঙ্কা করছেন তারা। তিনিও ব্রীজের মুখ ও খালটি উম্মুক্ত করার দাবি জানান।

কৃষকরা দাবি করে বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কয়েকটি দপ্তরে দু’দফা ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করলেও কোন সুরহা হয়নি বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন। তবে এবারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সহযোগীতায় বাঁধ কাটার ব্যবস্থা চাইলে তিনি ব্যবস্থার গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। অবশ্য পরে উপজেলা মহোদয়ের নির্দেশনায় এক সময়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্তপুর্বক ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কার্যক্রম ও কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
একই ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। এছাড়া তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে