বাগমারায় সরকারি খালে প্রভাবশালীদের থাবা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২০; সময়: ৪:২৯ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় সরকারি খালে প্রভাবশালীদের থাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় সরকারি খাল প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোটি টাকার মাছসহ খালটি দখলে নেওয়াতে স্থানীয় চারশতাধিক মৎস্যজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের মাছ ধরতে বাধা দেওয়ার কারণে খালে নামতে পারছেন না। নিরুপায়ে জেলেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

রোববার বিকেলে স্থানীয় প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। খাল দখলে নেওয়া প্রভাবশালীরা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের লোক পরিচয় দিয়ে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে এলাকার সব শ্রেণির ৪০-৪৫জন লোকজন তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

এলাকাবাসী, মৎস্যজীবীদের লিখিত ও প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করে বলেন, গত বছর পানি উন্নয়নবোর্ড উপজেলার হামিরকুৎসা ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুবিলা-যশের বিলের প্রায় ১১ কিলোমিটার খনন করে। দুই কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচে খালটি পানি প্রবাহের উপযোগি করে খনন করা হয়। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে খালটি যৌবন ফিরে পায়। স্থানীয় মৎস্যজীবাও আশায় বুক বাঁধে খালটিতে মাছ ধরার জন্য। প্রতি বছর খালটিতে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার প্রাকৃতিক মাছ ধরে থাকেন।

তবে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি তৈয়বুর রহমানসহ ৪০-৪২ জন নেতা-কর্মীর খালটি দখলে নিয়েছেন। তাঁরা তালঘরিয়া এলাকায় খালের মুখে বাঁশের বেড়া, বানা, জাল ও নিচে মাটির বস্তা ফেলে নিয়ন্ত্রণে নেন।

সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পানি কোনোরকম চলাচল করতে পারলেও বিলের মাছ থেকে যাচ্ছে খালে। এছাড়া চলতি বছরের তৃতীয় দফা বন্যায় বিভিন্ন পুকুর ও খাল-বিলের মাছ ভেসে আশ্রয় নিয়েছে এই খালেই। এই সুযোগে প্রভাবশালীরা বিলটি দখলে নিয়েছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দখলকারীরা। নৌকায় করে খালে টহল দেওয়া ছাড়াও মাছের খাবার ছেটানো শুরু করেন। স্থানীয় মৎস্যজীবী ও লোকজনদের মাছ ধরতে বাধা দেওয়া ছাড়াও তাঁদের জাল দড়ি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেককে পিটিয়ে বিল থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে লাখ লাখ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করছেন।

দক্ষিণ মাঝগ্রামের কার্ডধারী মৎস্যজীবী আবু রায়হান, আসেকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে খালটিতে প্রচুর প্রাকৃতিক মাছ হয়। এলাকার প্রায় আড়াইশ জেলে খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ ছাড়াও অর্থ সঞ্চয় করে থাকেন। তবে এ বছর প্রভাবশালীরা খালটি দখলে নেওয়ার কারণে মাছ ধরতে পারছেন না। কয়েক দফা খালে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিলে তাঁদের কাছ থেকে জাল দড়ি কেড়ে নিয়ে খাল থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও হামিরকুৎসা ইউনিয়নের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু লোভী লোকজন দলের নাম ভাঙিয়ে খালটি নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ছাড়াও এলাকায় বিশৃংখলার সৃষ্টি করছে। তিনিও বিলটি উম্মুক্ত করার দাবি জানান।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিলটিতে প্রতি বর্ষা মৌসুমে এলাকার জেলে ছাড়াও সাধারণ লোকজন মাছ ধরে থাকেন। প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার প্রাকৃতিক মাছ ধরে থাকেন তাঁরা। এবছর প্রভাবশালীরা খালটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ফলে কেউ-ই মাছ ধরতে পারছেন না। এটা অমানবিক বলে মন্তব্য করেন।

এদিকে খালের মুখে প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে জেলে ও সাধারণ লোকজনের মাছ ধরার সুযোগের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সবর হয়েছেন এলাকার লোকজন। তাঁরা ‘মাঝগ্রাম যশের বিল রক্ষা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ চালু করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং জন সমর্থন আদায় করছেন।

হামিরকুৎসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খাল নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, শুধু আওয়ামী লীগের নয়, অন্য দল ও গ্রুপের লোকজনও রয়েছে। সবার মতামতের খালের মুখে বেড়া দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • 72
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে