ভাড়ায় চলছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২০; সময়: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ |
ভাড়ায় চলছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল

নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরাঞ্চলের তাঁতীদের সুতার চাহিদা মেটানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চালু হওয়া রাজশাহী টেক্সটাইল মিল এখন ভাড়ায় চলছে।টেক্সটাইল মিলের কারখানা, গোডাউন, আবাসিক কোয়ার্টার, পুকুর ও ভবন ভাড়া দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা আয় করছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ভবন থেকে শুরু কারখানা ও গোডাউন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারখানায় স্থাপিত মেশিনারীজও অনেকগুলোই নষ্ট হয়ে গেছে।

টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিমাসে ১১ টি গোডাউন থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার, বাসাবাড়ি থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার এবং অন্যান্য বাবদ ২৫ টাকা ভাড়া পায় কর্তৃপক্ষ।এছাড়া কারখানা ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে পায় ৭৭ হাজার টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), স্বপ্ন কনফেকশনারী, অ্যাগ্রোলিংক বিডি, রাইট অ্যাগ্রো, বন্ধু ডিস্ট্রিবিউটরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া আছে টেক্সটাইল মিলের এসব গোডাউন ও ভবন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ২৫.৯৮ একর জায়গার উপর ১৯৭৪ সালে স্থাপিত মিলটি উৎপাদনে যায় ১৯৭৯ সালে। ১৯৭৮ সালে ভারত থেকে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেশিনারীজ কিনে নিয়ে আসা হয়।বর্তমানে সেসব মেশিনারীজের বাজারমূল্য ৩ কোটি ৬২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০২ পর্যন্ত চলার পর গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ১৫০০ জন শ্রমিককে বিদায় করে দিয়ে ২০০৩ সালের ৩০ জুন মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৪ সালের আগস্ট থেকে মিলটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চালু করা হয়।এরপর ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে মিলটি বন্ধ হয়ে একবছর পর পুনরায় চালু হয়ে ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চলে পুনরায় মিলটি বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের পর থেকে মিলটি সম্পূর্ণ ভাড়া পদ্ধতিতে চালু আছে। টেন্ডারের মাধ্যমে তিনবছরের জন্য কারখানাটি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফার মেয়াদ ছিলো চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। বর্তমানে কারখানাটি দ্বিতীয় দফার টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে আগামি বছরের শুরু থেকে কারখানাটি পুনরায় ভাড়ার ভিত্তিতে চালু হবে। প্রথম দফায় মাসিক ৭৭ হাজার টাকায় নারায়ণগঞ্জের মোবারক ট্রেডার্স কারাখানাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।কারখানা থেকে সুতা উৎপাদন করে তিনি নারায়ণগঞ্জে সুতা বিক্রি করতেন।ভাড়া দেওয়া হলেও কারখানাটির ৪৭টি মেশিনারীজের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহৃত হতো। বাকি ৬০ শতাংশ মেশিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, নিম্নমানের ভারতীয় মেশিন হওয়ায় চালুর ৪২ বছরের মধ্যে মাত্র দুই বছর শুধুমাত্র ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালেই মিলটি মুনাফা অর্জন করেছে।যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও এই অঞ্চলের দরিদ্র তাঁতীদের নিকে নায্যমূল্য সুতা সরবরাহের জন্যই মিলটি স্থাপিত করা হয়েছিলো।

ভাড়া দিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় করলেও অদ্যাবধি মিলটির ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি টাকা।এর মধ্যে রয়েছে বকেয়া রয়েছে, বিদ্যুৎ বিলের সারচার্জ ২৯ লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, স্বেচ্ছাবসর গ্রহণকারী স্থায়ী শ্রমিকদের মেডিকেল ভাতা বাবদ বকেয়া সাড়ে ১২ লাখ টাকা, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, বকেয়া ওয়ার হাউজ লাইসেন্স ফিস বাবদ সোয়া লাখ টাকা এব টানওভার ট্যাক্স দুই লাখ টাকা।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের ব্যবস্থাপক (কারিগরি) ও মিল ইনচার্জ রবিউল করিম জানান, বর্তমানে মিলটি দেখভালের জন্য ৫ জন স্থায়ী ও ১৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।সেদিক থেকে বন্ধ মিল থেকে মাসে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় লাভজনকই। কারণ ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তবে সরকার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনাররশিপের মাধ্যমে মিলটি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কারণ সরকারী অর্থায়নে বা যৌথ মালিকানায় নতুন আধুনিক মেশিনারীজ স্থাপন করা গেলে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব এবং মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানেও পরিণত করা সম্ভব হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে