রাজশাহীতে তবুও নিয়ন্ত্রণহীন আলুর দাম

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২০; সময়: ৩:০৯ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে তবুও নিয়ন্ত্রণহীন আলুর দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : বন্যার ধাক্কায় শাক-সবজিসহ প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম যখন চড়া সেই সময়ে আলুর দামও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে; এরমধ্যে আলুর দাম বেঁধে দেওয়াকে সরকারের ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ বলছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আলু বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা।

চলতি মাসের শুরুতেও রাজশাহীর বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। সেই আলুর দাম বেড়ে ৫০ টাকায় উঠে যায়। তবে শুক্রবার রাজশাহীর সাহেববাজারের পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজি। আর খুচরা বাজারে ৪০ টাকা।

খুচরা বাজারে সারা বছরই হিমায়িত আলুর দাম প্রতি কেজি ২২ টাকা থেকে ২৬ টাকার মধ্যে থাকে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন আলু ঘরে তোলার সময় দাম থাকে ২০ টাকার নিচে। চলতি অক্টোবরের শুরু থেকে আলুর দাম প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে বাড়তে শুরু করে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরায় এই দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপরই সরকার খুচরায় আলুর সর্বোচ্চ দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে না পেরে ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি আলুর দাম সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে রাজশাহীর রহমান কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, অধিক ফলনের কারণে গত ১০ বছর ধরেই কোনো না কোনো মহাজন আলুতে লোকসান দিয়ে আসছেন। আমি নিজেও গত বছর লোকসান দিয়েছি। এবার বাজার ভালো থাকায় সবাই একটু মুনাফা করতে চেয়েছে। সরকার লোকসানে হস্তক্ষেপ না করলেও এখন মুনাফায় ঠিকই হাত দিয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় ৮ টাকা ৩২ পয়সা আর আলু যখন হিমাগারে সংরক্ষণ করা শুরু হয় তখন প্রতি কেজি আলুর দাম থাকে ১৪ টাকা। আলু চাষী ছাড়াও মহাজন, হিমাগারের মালিক, ব্যাপারী, আড়ৎদার ও পাইকারি বিক্রেতার হাত হয়ে আলু আসে খুচরা বিক্রেতার কাছে। সেখান থেকেই ভোক্তা পেয়ে থাকেন আলু।

এবার মওসুমে হিমাগারে সংরক্ষণের সময় প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। প্রতি কেজিতে হিমাগার ভাড়া বাবদ তিন টাকা ৬৬ পয়সা, বাছাইতে ৪৬ পয়সা, ওয়েট লস ৮৮ পয়সা, মূলধনের সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ এক কেজি আলুর সংরক্ষণে সর্বোচ্চ ২১ টাকা খরচ পড়ে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে গত মওসুমে এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যেখানে বছরে আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ টন। সেই হিসাবে ৩১ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা।

রাজশাহী অঞ্চলের চাষী ও মহাজনরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে এসে প্রতিবছরই আলুর দাম এভাবে বাড়তে থাকে। তবে সেটা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ বা এর চেয়ে একটু বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। এবার প্রায় দুই মাস আগে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আলুর মজুদ কমে আসার ভূমিকা রয়েছে বলে ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামের ভাষ্য। তিনি বলেন, প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের ৭০ শতাংশ আলু শেষ হয়ে গেছে। তখনই আলুর দাম বেড়ে গেছে। আমার যেমন ৫০০ বস্তা আলু ছিল। ৩০০ বস্তা বিক্রি হয়ে গেছে বলেন তিনি।

বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে পাঁচটি হিমাগারের মালিক ফজলুর রহমান বলেন, এবার আলুর আবাদ ‘কম হওয়ায়’ তার সংরক্ষণাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতার ৭৫ শতাংশ পূর্ণ হয়েছিল। ইতোমধ্যেই প্রায় ৮০ শতাংশ আলু ভোক্তা পর্যায়ে চলে গেছে। এখন প্রায় দুই লাখ বস্তা আলু রয়েছে যার মধ্যে ৪০ শতাংশ আলু ব্যবহার হবে নতুন বীজতলায়।

তিনি বলেন, দেশে নতুন আলু আসতে সময় লাগবে আরও মাস দুয়েক। বন্যার কারণে এবার আগাম আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন আলু আরও বিলম্বে আসতে পারে। দেশে যে আলু রয়েছে তা দিয়ে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত চলে যাবে বলে হিসাব করা হচ্ছে। তবে বন্যার কারণে নতুন আলু আসতে দেরি হলে সেক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে, বলেন রাজশাহীর হিমাগার মালিক ফজলুর।

  • 171
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে