রাজশাহীর ২৪ শতাংশ শিশু অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২০; সময়: ১০:১৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর ২৪ শতাংশ শিশু অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর ২৪ শতাংশ শিশু অনলাইনে যৌন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। গেল সেপ্টেম্বরে রাজশাহীর বেসরকারি সংস্থা এসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভলপমেন্ট (এসিডি) একটি জরিপ পরিচালনা করে হয়রানির এই হার পেয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের সাগরপাড়ায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন এসিডির প্রকল্প সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, প্রশ্নমালা প্রণয়ন ও সরাসরি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১০০ জন শিশুর ওপর এই জরিপ করা হয়। এরা সবাই শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৫০ জন ছেলে এবং ৫০ জন মেয়ে। রাজশাহী মহানগরীর ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

এতে দেখা যায়, রাজশাহীর ৭১ শতাংশ শিশু কোন না কোনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। এদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে। বাকি ৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ শিশু কোন না কোনভাবে অনলাইনে যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ একাধিকবার এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে।

জরিপে উঠে এসেছে, মেসেঞ্জারে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে, খারাপ গ্রুপে লাইভে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বা বাজে ভাষায় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত ছবি অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পাদনা করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যারা হয়রানির শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ বিষয়টি কাউকেই জানায়নি। আর ৫৯ শতাংশ শিশু খুব কাছের বন্ধুদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। কিন্তু অভিভাবককে জানানোর হার খুবই কম। তবে যারা হয়রানির বিষয়টি অবহিত করেছে তাদের ৩৫ শতাংশ প্রতিকার পেয়েছে।

প্রতিকার বলতে জরিপে অংশগ্রহণকারী হয়রানির শিকার শিশুরা জানিয়েছে তাদের ইন্টারনেট সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ করা হয়েছে। কেউ কেউ ফেসবুক-মেসেঞ্জার ব্লক করে রেখেছে। আবার কেউ কেউ অভিভাবকের মাধ্যমে যারা হয়রানি করেছে তাদের অভিভাবককে বিষয়টি অবহিত করে তার সন্তানকে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার জন্য অনুরোধ করেছে। কিন্তু কেউ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেনি।

এসিডির প্রকল্প সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল অনলাইনে যৌন নির্যাতন ও হয়রানি কমিয়ে আনতে এ বিষয়ে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন। এর মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপকহারে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হয়। এছাড়া স্কুলপর্যায়েই এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, শিশুদের বিষয়টি খোলামেলাভাবে অভিভাবকদের জানানোর মতো পরিবেশ বাড়িতে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের সুপারিশ করা হয়।

মোস্তফা কামাল বলেন, কোন শিশু অনলাইনে যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হলে অনেক ক্ষেত্রে ওই শিশুকেই দোষি করা হয়। তাই তাকে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত রাখা হয়। কিন্তু এর কারণে ওই শিশু তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে পিছিয়ে পড়ে। তাই শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত না করে যৌন নির্যাতন বা হয়রানি কমিয়ে আনার ব্যাপারে সকলকে কাজ করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় এসিডির প্রোগ্রাম অফিসার শাহানা শারমিনও উপস্থিত ছিলেন। সভায় শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তারা এ বিষয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেন।

  • 75
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে