রাজশাহীর বাজার চলছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেমত

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২০; সময়: ১:৪২ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর বাজার চলছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেমত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাজারে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না চালসহ সবজির দাম। সরকার নির্ধারিত দামে চাল ও আলু বিক্রি না করে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমত দামে চাল বিক্রি করছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারী মনিটরিং থাকার কথা থাকলেও রাজশাহীর বাজারে মনিটরিং নেই। এ অবস্থায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা পর্যন্ত।

অপরদিকে, এক মাস আগে বাজারে আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেতো। কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতে সেই আলুর দাম এখন বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। সরকার ৩০ টাকা কেজি দর বেধে দিলেও শুক্রবার রাজশাহীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।

আলুর পাশাপাশি বাজারে সকল সবজির দামও ছিল চড়া। পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বেগুন ৬০, ঢেঁড়স ৫০, করলা ৮০, কচু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছড়াও কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা, পিয়াজ ৮০ টাকা ও শশা ৬০ টাকা কেজি দরে।

রাজশাহী সাহেববাজারের সবজি বিক্রেতা লিটন আলী বলেন, শুক্রবার সাহেববাজারের কোন আড়তে আলু নাই। আগে যাদের কেনা ছিল তারাই শুধু খুচরা বিক্রি করেছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। তাদের কেনা আছে ৪০ টাকা কেজি। এছাড়াও বন্যার কারণে সবজির খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির আমদানি কমে গেছে। এ কারণে এই বাড়তি দাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চালের বাজার সরকারি কোন পদক্ষেপেই সিন্ডিকেট মুক্ত করা যাচ্ছে না। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে অসাধু ব্যবসায়ী, মজুদদার ও সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ৭টি মনিটরিং টিম। কিন্তু তারপরও সিন্ডিকেট মিল মালিকদের কারসাজি বন্ধ হচ্ছে না। বরং কোনো কারণ ছাড়াই অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকার চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পঞ্চাশ কেজি ওজনের ভালমানের এক বস্তা মিনিকেট চালের দাম মিল গেটে ২ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের চালের দাম ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে নতুন দর অনুযায়ী মিল গেটে মিনিকেট চালের প্রতিকেজির দাম পড়বে ৫১ টাকা ৫০ পয়সা। আর মাঝারি চালের দর মিল গেটে পড়বে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা। খুচরা বাজারে এ দাম সর্বোচ্চ ১-২ টাকা বেশি করা যেতে পারে। কিন্তু রাজশাহীর বাজারে ওই দাম কার্যকর হয়নি। শুক্রবার সরকারি দরের চেয়ে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেশী দামে বিক্রি হয়েছে।

একেবারে খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ ও দিনমজুর মানুষের খাবারের ভরসা মোটা চাল। গত দু’সপ্তাহ আগেও স্বর্ণা ও চায়না ইরি খ্যাত মোটা চাল রাজশাহীতে প্রতিকেজি ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন তা বাড়তে বাড়তে ৪৮ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। খুচরা বাজারে এখন প্রতিকেজি পাইজাম ও লতা চাল ৫৪-৫৬, স্বর্ণা চাল ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৫৮-৬০ এবং মিনিকেট মানভেদে ৫৫-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে নাকি মিলগেটে চালের দাম বেড়েছে। আর ওই কারণে পাইকারি বাজারেও দাম বাড়তি।

রাজশাহীর সাহেববাজার চাল ব্যবসায়ী মেসার্স জামান ট্রেডার্স এর মলিক কামারুজ্জামান বলেন, মিল গেট থেকেই দাম বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনছি। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে আমরা বিক্রি করতে পারছি না। বেঁধে দেয়া দামে কোন প্রতিষ্ঠানই চাল দিতে পারে না। তাদের লোকসানের কারণে এটি করতে পারছে না। ফলে আমরাও বিক্রি করতে পারছি না।

রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে দাম ঠিকই আছে। তবে কোথাও কোথাও দাম একটিু বেশি রাখা হচ্ছে। আমরা তাদের সচেতন করেছি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার কোল্ড স্টোরগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীরে সচেতন করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিএম ফারুক বলেন, আমরা মিল মালিকদের সাথে কথা বলেছি। এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি। অনকেটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে রাজশাহীর বাজার যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করবো। প্রয়োজনে মনিটরিং কর্মকর্তাসহ আমরা অভিযান চালাবো।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের কাছে দাম বেঁধে দেয়া সংক্রান্ত সরকারি কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে যেহেতু বাজারে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এজন্য আমরা আমাদের মোবাইল টিম দিয়ে অভিযান ও মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি এবং রাখবো।

  • 227
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে