বালু তোলার রাস্তা নির্মাণে বনায়নের গাছ কাটার চেষ্টা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২০; সময়: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ |
বালু তোলার রাস্তা নির্মাণে বনায়নের গাছ কাটার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার শ্যামনগর বালুঘাট এলাকায় ব্যক্তিগত ব্যবসা তথা বালু তোলার রাস্তা করার জন্য সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সরকারি গাছ কাটার পাঁয়তারা করছেন স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তাদের পক্ষ থেকে বনায়ন প্রকল্পের সভাপতিকে গাছ কেটে রাস্তা করে দেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগ উঠেছে।

বনায়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বলছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ওই এলাকার বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় রাতের আঁধারে গাছ কেটে সরিয়ে ফেলার পায়তারা করছে। গাছ কেটে ফেলা হলে শহররক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বর্ষা মৌসুমে বাঁধের উপরের অংশে বসবাস করা ছিন্নমূল মানুষের ঘরবাড়িও পদ্মায় বিলীন হয়ে যেতে পারে। এজন্য গাছ কাটা ঠেকাতে বনবিভাগের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামপুর বালুঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পিডাব্লিউডি) ফটকের পূর্বপাশে শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে বালু ব্যবসা গড়ে তুলতে কয়েক বিঘা জমি ইজারা নিয়েছেন চরশ্যামপুরের আজিজুল ইসলামের ছেলে জাকিরুল ইসলামসহ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তারা ওই জায়গা এরই মধ্যে বাঁশের চরাট দিয়ে ঘিরেও ফেলেছেন। তবে ওই জমি থেকে ট্রাকে করে বালু পরিবহনের কোন রাস্তা নেই। শহররক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে ট্রাকে বালু পরিবহন করতে এখন বাধা সামাজিক বনায়নের ২০/২৫টি গাছ।

অভিযোগ উঠেছে- বালু ব্যবসা চালু করতে মরিয়া জাকিরুল তার সহযোগীদের দিয়ে শ্যামপুর সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সভাপতি সাইফুল ইসলামকে চাপ দিচ্ছেন। তবে নিয়ম না থাকায় প্রকল্পের সভাপতি গাছ কাটতে দিতে রাজি হননি।

বনায়ন প্রকল্পের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকিরুল ও তার তার ব্যবসার সহযোগিরা বালু ব্যবসা করার জন্য জমি নিয়েছে শুনেছি। জাকিরুল সরাসরি আমাকে কিছু বলেনি। তবে তার পার্টনার অথবা লেবাররা আমাকে গাছ কাটার কথা জানিয়েছে। তাদেরকে বলেছি- এখান থেকে গাছ কাটতে হলে সরকারের অনুমতি এবং টেন্ডারের মাধ্যমেই কাটতে হবে। কেউ যদি জোর করে গাছ কাটে, তবে প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে আমি এটা হতে দিবো না।

প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করা বনবিভাগের কর্মকর্তা মনসুর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ কাটতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে কাটতে হয়। তবে প্রকল্পের আওতায় থাকা কাঠের গাছ কমপক্ষে ১০ বছর এবং ফলদ বৃক্ষ ২০ বছর বয়সী না হলে টেন্ডারেও কাটা যাবে না। কউ যদি জোর করে গাছ কাটার চেষ্টা করে বনবিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

রাস্তা তৈরি করতে গাছ কাটার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমরা লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করব। বালু ব্যবসার ওপর আমাদের রুটি-রুজির একটা ব্যবস্থা হবে। তার জন্য ২-১ হাজার টাকার দুই-চারটা গাছ তো কাটতেই পারি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অনুমতি সাপেক্ষেই গাছ কাটা হবে।
এদিকে বালু ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শ্যামপুর ঘাটে ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল জিয়ারুল নামে একজন হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বালু ব্যবসায়ী জাকিরুল। মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন। তবে জাকিরুলের দাবি, স্থানীয় পৌর মেয়র ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে হত্যাকাণ্ডের মিমাংসা করে দিয়েছেন।

স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, জিয়ারুল হত্যার পর শ্যামনগর বালুঘাট থেকে ব্যবসা গুঁটিয়ে নিয়ে মুক্তারপুর ঘাটে চলে যান জাকিরুল। তবে দীর্ঘদিন পর ফের শ্যামপুর ঘাট এলাকায় এসেই বনায়নের গাছ কাটার পাঁয়তারা করার অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে